বিলু ঘুমিয়ে পড়েছে। কোথায় ছিলেন নাগর এত রাত অব্ধি? নতুন কিছু জুটলো কোথাও?
ভবানী বাঁড়ুয্যে অপ্রসন্ন মুখে বললেন—তোমার কেবল যতো-
—হি হি হি-
—হ্যাঁঃ—হাসলেই মিটে গেল।
—কি করতে হবে শুনি তবে।
—দ্যাখো গে লোকে কি করছে। মানুষ হয়ে জন্মে আর কিছু করবে না? শুধু খাবে আর বাজে বকবে?
—ওগো অতশত উপদেশ দিতি হবে না আপনার। আপনি পরকালের ইহকালের সর্বস্ব আমাদের। আর কিছু করতে হয়, সে আপনি করুন গিয়ে। আমরা ডুমুরের ডালনা দিয়ে ভাত খাবো আর আপনার সঙ্গে ঝগড়া করবে। এতিই আমাদের স্বগগো। খেয়ে উঠে থোকাকে ধরুন॥
ভবানী খেয়ে উঠে খোকনকে আদর করলেন কতক্ষণ ধরে। আট মাসের সুন্দর শিশু। তিলুর পোকা। সে হাবলার মত বিস্ময়ের দৃষ্টিতে বাবার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। তারপর অকারণে একগাল হাসি হাসে দন্তবিহীন মুখে, বলে ওঠে —গ্-গ্-গ্-গ্-
ভবানী বলেন-ঠিক ঠিক।
—হেঁ-এ-এ-ইয়া। -গ্-গ্-গ্-গ্-
—ঠিক বাবা।
খোকা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে নিজের হাতখানা নিজের চোখের সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে-যেন কত আশ্চর্য জিনিস। ভবানীর সামনে অনন্ত আকাশের এক ফালি। বাঁশবনে জোনাকি জ্বলচে। অন্ধকারে পাকা কুলের গন্ধের সঙ্গে বনমালতী ও ঘেটকোল ফুলের গন্ধ। নক্ষত্র উঠেচে এখানে ওখানে আকাশে। কত বড় আকাশ, কত নক্ষত্র-চাঁদ উঠেচে কৃষ্ণা তৃতীয়ার, পূর্ব দিগন্ত আলো হয়েছে। এই ফুল, এই অন্ধকার, এই অবোধ শিশু, এই নক্ষত্র-ওঠা আকাশ সবই এক হাতের তৈরি বড় ছবি। ভবানী অবাক হয়ে যান ওর খোকার মতই।