পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুখুয্যেদের বিধবা বৌ ও ন'ঠাকরুণ তাঁকে সাহায্য করতে লাগলেন।

 ভাত রান্না হোল কিন্তু বাইরে লম্বা বান্ কেটে। আর ছিরু রায় এবং হরিনাপিত বাকী মাছ কুটে ঝুড়ি করে বাইরের বানে নিয়ে এল ভাজিয়ে নিতে। ভাত যারা রান্না করছিল, তারা হাঁকিয়ে দিয়ে বললে-এখন তাদের সময় নেই। নিজের বান্ কেটে মাছ ভাজুক গিয়ে। এই কথা নিয়ে দুই দলে ঘোর তর্ক ও ঝগড়া, বৃদ্ধ বীরেশ্বর চক্কত্তি এসে দু’দলের ঝগড়া মিটিয়ে দিলেন শেষে।

 রাজারামের এক দূরসম্পর্কের ভাইপো সম্প্রতি কলকাতা থেকে এসেচে। সেখানে সে আমুটি কোম্পানীর কুঠিতে নকলনবিশ। গলায় পৈতে মালার মত জড়িয়ে রাঙা গামছা কাঁধে সে রান্নার তদারক ক'রে বেড়াচ্ছিল। বড় চালের কথাবার্তা বলে। হাত-পা নেড়ে গল্প করছিল কলকাতায় একরকম তেল উঠেচে, সায়েবরা জ্বালায়, তাকে মেটে তেল বলে। সায়েব জালায় বাতিতে। বড় দুর্গন্ধ।

 রূপচাদ মুখুয্যে বললেন-পিদিম জ্বলে?

 না। সায়েববাড়ির বাতিতে জ্বলে। কাঁচ বসানো, সে এখানে কে আনবে? অনেক দাম।

 হরি রায় বললেন-আমাদের কাছে কলকেতা কলকেতা করো না। কলকেতায় যা আছে তা আগে আসবে আমাদের নীলকুঠিতে। এদের মধ্যে সায়েব কলকাতায় নেই।

 —নাঃ নেই! কলকাতার কি দেখেছ তুমি? কখনো গেলে না তো। নৌকা ক'রে চলল নিয়ে যাবে।

 —আচ্ছা, নাকি কলের গাড়ি উঠেছে সায়েবদের দেশে? নীলকুঠির নদেরচাঁদ মণ্ডল শুনেচে ছোট সায়েবের মুখে। ওদের দেশ থেকে নাকি কাগজে ছেপে ছবি পাঠিয়েছে। কলের গাড়ি।

 ভবানী বাড়ুয্যে খোকাকে কোলে, নিয়ে পাড়া প্রদক্ষিণ করতে চললেন, পেছনে পেছনে স্বয়ং রাজারাম চললেন ফুল আর খই ছড়াতে ছড়াতে। দীনু মুচি ঢোল বাজাতে বাজাতে চললো। বাঁশি বাজাতে বাজাতে চললো তার

৭১