পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

রাত-দুপুরির সময় রণ-পা চড়িয়ে বেরোলাম। ভোরের আগে নিজের গাঁয়ে ফিরেলাম। এগারো কোশ রাস্তা।

 —এর চেয়ে বেশি যাও না?

 —একবার পনেরো কোশ পজ্জন্ত গিইলাম। নন্দীপুর থেকে কামারপেড়ে। মুরশিদ মোড়লের গোলাবাড়ি।

 —এইবার ওসব ছেড়ে দাও! ভগবানের নাম করো।

 —তাই তো আপনার কাছে যাতায়াত করি বাবাঠাকুর, আপনাকে দেখে কেমন হয়েছে জানিনে। মনটা কেমন ক'রে ওঠে আপনাকে দেখলি। একটা উপায় হবেই আপনার এখানে এলি, মনঙা বলে।

 —উপায় হবে। অন্যায় কাজ একেবারে ছেড়ে না দিলে কিন্তু কিছুই করতে পারা যাবে না বলে দিচ্চি।

 হলা পেকে হঠাৎ ভবানী বাঁড়ুয্যের পা ছুঁয়ে বললে~-আপনার দয়া বাবাঠাকুর। আপনার আশীব্বাদে হলধর যমকেও ডরায় না। রণ-পা ছড়িয়ে যমের মুণ্ডু কেটে আনতি পারি, যেমন সেবার এনেলাম ঘোড়ের ভাঙ্গায় তুষ্ট কোলের মুণ্ডু-শোনবেন সে গল্প -

 হলা পেকে অট্টহাস্য করে উঠলো।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে দেখতে পেলেন পরকালের ভয়ে কাতর ভীরু হলধর ঘোষকে নয়, নির্ভীক, দুর্জয়, অমিততেজ হলা পেকেকে—যে মানুষের মুণ্ডু নিয়ে খেলা করেছে, যেমন কিনা ছেলেপিলেরা খেল পিটুলির ফল নিয়ে! এ বিশালকায়, বিশালভুজ হল পেকে মোহমুদগরের শ্লোক শুনবার জন্যে তৈরি সেই- নরহস্তা, দস্যু আসলে যা ভাই আছে।


 ভবানী বাঁড়ুয্যে দেড় বছরের মধ্যেই এ গ্রামকে, এ অঞ্চলকে বড় ভালো বাসলেন। এমন ছায়াবহুল দেশ তিনি কোথাও দেখেন নি জীবনে। বৈঁচি বাঁশ, নিম, সোঁদাল, রড়া কুঁচলতার বনবোপ। দিনে-রাতে শালিখ, দোয়েল, ছাতারে আর বৌ-কথা-ক পাখীর কাকলী। ঋতুতে ঋতুতে কত কি বনফুলের

৭৫