পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 —কল্যাণ হোক। নালু যে, হাটে চললে?

 —আজ্ঞে হ্যাঁ।

 —একটু সোজা হয়ে বসো। শিপ টন্ সাহেব ইদিকি আসচে—

 —বাবু, রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে যাবে? বড্ড মারে শুনিচি।

 —না না, মরবে কেন? ও সব বাজে। বোসো এখানে।

 —ঘোড়ায় যাবেন?

 —না, বোধ হয় টমটমে। আমি দাঁড়াবো না।

 মোল্লাটি নীলকুঠির বড় সাহেব শিপ্‌টন্‌কে এ অঞ্চলে বাঘের মত ভয় করে লোকে। লম্বাচওড়া চেহারা, বাঘের মত গোল মুখখানা, হতে সর্বদাই চাবুক থাকে। এ অঞ্চলের লোক চাবুকের নাম রেখেছে ‘শ্যামাচাঁদ'। কখন কার পিঠে 'শ্যামাচাঁদ’ অবতীর্ণ হবে তার কোন স্থিরতা না থাকাতে সাহেব রাস্তায় বেরুলে সবাই ভায়ে সন্ত্রস্ত থাকে।

 এমন সময়ে আর একজন হাটুরে দোকানদার সতীশ কলু, মাথায় সর্ষে তেলের বড় ভাঁড় চ্যাঙারিতে বসিয়ে সেখানে এসে পড়লো। রাস্তার ধারে নালাকে দেখে বললে—চলে, যাবা না?

 —বোসো। তামাক খাও।

 —তামাক নেই।

 —আমার আছে। দাঁড়াও, শিপটন্ সাহেব চলে যাক আগে।

 —সায়েব আসচে কেডা বললে?

 —রায় মশায় বলে গ্যালেন—বোস—

 হঠাৎ সতীশ কলু সামনের দিকে সভয়ে চেয়ে দেখে ষাঁড়া আর শেওড়া ঝোঁপের পাশ দিয়ে নিচের ধানের ক্ষেতের মধ্যে নেমে গেল। যেতে যেতে বললে—চলে এসো, সায়েব বেরিয়েচে—

 নালু পাল পানের মোট গাছতলায় ফেলে রেখেই সতীশ কলুর অনুসরণ করলে। দূরে ঝুম্‌ঝুম্‌ শব্দ শোনা গেল টমটমের ঘোড়ার। একটু পরে সামনে রাস্তা কাঁপিয়ে সাহেবের টমটম কাছাকাছি এসে পড়লো এবং থামবি তো থাম্‌