—কেন গিইছিলি, কি করিছিলি, সাত কৈফিয়ৎ দিতে হবে। আর সবাই তো জানে, মুই চোর ডাকাত। খাতি পাইনে তাই চুরি ডাকাতি করি, খাতি পেলি কি আর করতাম। গেরামে এসে যা দেখচি, চালের কাঠা দু’ আনা দশ পয়সা। তাতে আর কিছুদিন গারদে থাকলি হোত ভালো। খাবো কেমন করে অতি আক্রা চালের ভাত? ছেলেপিলেরে বা কি খাওয়াবো। কি বলেন বাবাঠাকুর?
সন্ন্যিসি বললেন—যা ভালো বোঝো তাই করবে বাবা। তবে মানুষ খুন কোরো না। ওটা করা ঠিক নয়।
হলা পেকে এতক্ষণ চুপ ক’রে বসে ছিল। মানুষ খুনের কথায় সে এবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। হলা আসলে হল খুনী। অনেক মুণ্ডু কেটেছে মানুষের। খুনের কথা পাড়লে সে উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
চৈতন্যভারতীর সামনে এসে বল্লে—জোড়হাত করি বাবাঠাকুর। কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলি শুনুন। পানচিতে গাঁয়ের মোড়ল-বাড়ি সেবার ডাকাতি করতি গেলাম। যখন সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠচি, তখন ছোট মোড়ল মোরে আটকালে। ওর হাতে মাছমারা কোঁচ। এক লাঠির ঘায়ে কোঁচ ছুড়ে ফেলে দেলাম—আমার সামনে লাঠি ধরতি পারবে কেন ছেলেছোকরা? তখন সে ইট তুলি মারতি এল। আমি ওরে বললাম—আমার সঙ্গে লাগতি এসে না, সরে যাও। তা তার নিয়তি ঘুনিয়ে এসেচে, সে কি শোনে? আমায় একটা খারাপ গালগালি দেলে। সঙ্গে সঙ্গে এক লাঠিতে ওর মাথাটা দোফাঁক করে দেলাম। উণ্টে পড়লো গড়িয়ে সিঁড়ির নিচে, কুমড়ো গড়ান দিয়ে।
নিলু বললে—ইস্ মাগো!
চৈতন্যভারতী মশায় বললেন—তারপর?
—তারপর শুনুন আশ্চয্যি কাণ্ড। বড় মোড়লের পুতের বৌ, দিব্যি দশাসই সুন্দরী, মনে হোল আঠারো-কুড়ি বয়স—চুল এলো করে দিয়ে এই লম্বা সড়কি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে দোতলার মুখি সিঁড়ির নিচে, যেখান থেকে চাপা সিড়ি