তিলু শিউরে উঠলো জলের মধ্যে, বর্ষা-সন্ধ্যার কালো নদীজল এক্ষুনি কি তার প্রিয়তমের রক্তে রাঙা হয়ে উঠবে? এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেল জীবনের সব কিছু সাধ-আহ্লাদ?
চক্ষের নিমেষে তিলু জলে ডুব দিলে কিছু না ভেবেই।
স্বামীর পা কুমীরের মুখ থেকে ছাড়িয়ে নেবে কিংবা নিজেই কুমীরের মুখে যাবে। ডুব দিয়েই স্বচ্ছ জলের মধ্যে সে দেখতে পেলে, প্রকাণ্ড এক শিমুলগাছের গুঁড়ি জলের তলায় আড়ভাবে পড়ে, এবং তারই ডালপালার কাঁটায় স্বামীর কাপড় মোক্ষম জড়িয়ে আটকে গিয়েচে! হাতের এক এক ঝটকায় কাপড়খানা ছিঁড়ে ফেললে খানিকটা। আবার জলের ওপর ভেসে স্বামীকে বললে—ভয় নেই, ছাড়িয়ে দিচ্ছি, শিমুল কাঁটায় বেধেচে—
আবার দম নিয়ে আরো খানিকটা কাপড় ছিঁড়ে ফেললে। জলের মধ্যে খুব ভাল দেখাও যায় না। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসচে জলের তলায়, কি ক’রে কাপড় বেধেচে ভালো বোঝাও যায় না। আবারও ডুব দিলে, আবার ভেসে উঠলো। তিন-চার বার ডুব দেওয়ার পর স্বামীকে মুক্ত করে অবসন্নপ্রায় স্বামীকে শক্ত হাতে ধরে ভাসিয়ে ডাঙার দিকে অল্প জলে নিয়ে গেল।
ভবানী বাঁড়ুয্যে হাঁপ নিয়ে বললেন-বাবাঃ! ওঃ!
তিলুর কাপড় খুলে গিয়েছিল, চুলের রাশ এলিয়ে গিয়েছিল, দু’হাতে সেগুলো এঁটেসেঁটে নিলে, চুল জড়িয়ে নিলে, সেও বেশ হাঁপাচ্ছিল। কিন্তু তার সতর্ক দৃষ্টি স্বামীর দিকে। আহা, বয়েস হয়ে গিয়েচে ওঁর, তবু কি সুন্দর চেহারা! আজ কি হোত আর একটু হোলে?
হেসে স্বামীর দিকে চেয়ে বললে—বাপরে, কি কাণ্ডটা করে বসেছিলেন সন্দে বেলায়!
ভবানী বাঁড়ুয্যেও হাসলেন।
—খুব সাঁতার হয়েছে, এখন চলুন বাড়ি—
—তুমি ভাগ্যিস ডুব দিয়ে দেখেছিলে! কে জানত ওখানে শিমুলগাছের গুঁড়ি রয়েছে জলের তলায়। আমি কুমীর ভেবে হাত পা ছেড়ে দিয়েছিলাম তো—