পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রায়ান্ধকার নির্জন পথ দিয়ে দুজন বাড়ি ফিরে চলে।

 তিলু ভাবছিল—উঃ, আজ কি হোত, যদি সত্যি সত্যি ওঁর কিছু হোত!

 তিলু শিউরে উঠলো।

 স্বামী চলে গেলে সে কি বাঁচতো?


 নীলকুঠির বড়সাহেবের কামরায় দেওয়ান রাজারামের ডাক পড়েছিল। সম্প্রতি তিনি হাতজোড় করে বড়সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে।

 বড়সাহেব কাঠে-খোদা পাইপ খেতে খেতে বলেন—টোমার কাজ ঠিকমট হইটেছে না।

 —কেন হুজুর?

 —নীলের চাষ এবার এট লো ফিগার—কম হইল কি ভাবে?

 —হুজুর, মাপ করেন তো ঠিক কথা বলি। সেবার সেই রাহাতুনপুরির কাণ্ডকারখানার পর—

 জেন্ বিল্‌স্‌‌ শিপ্‌টন্ হঠাৎ টেবিলের ওপর দুম্ করে ঘুষি মেরে বললে—ও সব শুনিটে চাই না—আই ডোণ্ট উইশ ইউ স্পিন দ্যাট রিগম্যারোল ওভার হিয়ার এগেন—কাজ চাই, কাজ। ডুশো বিঘা জমিতে এ বছর নীল বুনিটে হইবে। বুঝিলে? বাজে কঠা শুনিটে চাই না।

 —হুজুর।

 মিঃ ডঙ্কিন্‌সন্‌ বদলি হইয়া গেলো। নটুন ম্যাজিষ্ট্রেট আসিল। এ আমাদের ডলে আছেন। নীলের ডাডন এ বছর ব্রিস্ক্‌লি আরম্ভ করিটে হইবে, ফিগার চাই। ডাডনের খাটা রোজ আমাকে ডেখাইবে।  —হুজুর।

 শ্রীরাম মুচি এ সময়ে সাহেবের কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল। তাকে দেখে রাজারাম বললেন—হুজুর, এ লোককে জিজ্ঞেস করুন। এদের চরপাড়া গ্রামের মুচিপাড়ার লোকে কিছুতে নীল বুনতি দেবে না, আপনি জিগ্যেস করুন ওকে—

৯৪