পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

লায়াল সাহেবের ‘ভারতসাম্রাজ্য’ গ্রন্থে যেমন সংক্ষেপে ও মনোরম আকারে বিবৃত হইয়াছে এমন আর কোথাও দেখি নাই।

 কিন্তু এই বিবরণ মানববুদ্ধির নৈপুণ্যব্যঞ্জক ঐতিহাসিক যন্ত্রতত্ত্ব— তাহা পাঠকের চিরকৌতুকাবহ ঐতিহাসিক হৃদয়তত্ব নহে। পশ্চিমদেশের কল পূর্বদেশে কিরূপ পুতুলবাজি করাইতেছে তাহার মধ্যে কিঞ্চিৎ হাস্যরস, কিঞ্চিৎ করুণরস এবং প্রভূত পরিমাণে বিস্ময়রস আছে; কিন্তু প্রত্যক্ষ হৃদয়ের সহিত হৃদয়ের সংঘর্ষে যে নাট্যরসভূমিষ্ঠ সাহিত্যের উপাদান জন্মে ইহাতে তাহা স্বল্প।

 ঈস্ট্‌ ইণ্ডিয়া কোম্পানির আমলে সেই ঐতিহাসিক উপন্যাস-রস, ইংরাজিতে যাহাকে রোম্যান্স্‌ বলে, তাহা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। তখন ইংরাজের স্বাভাবিক-দূরদর্শী রাজ্যবিস্তারনীতির মধ্যেও ব্যক্তিগত স্বার্থলোভ রাগদ্বেষের লীলায় ইতিহাসকে চঞ্চল ও উত্তপ্ত করিয়া তুলিয়াছিল।

 শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় তাঁহার ‘সিরাজদ্দৌলা' গ্রন্থে ঐতিহাসিক রহস্যের যেখানে যবনিকা উত্তোলন করিয়াছেন সেখানে মোগল-সাম্রাজ্যের পতনোম্মুখ প্রাসাদদ্বারে ইংরাজ বণিকসম্প্রদায় অত্যন্ত দীনভাবে দণ্ডায়মান। তখন ভারতক্ষেত্রে সংহারশক্তি যত প্রকার বিচিত্র বেশে সঞ্চরণ করিয়া ফিরিতেছিল তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা সাধু শান্ত ও দরিদ্র বেশ ছিল ইংরাজের। মারাঠি অশ্বপৃষ্ঠে দিগদিগন্তরে কালানল জ্বালাইয়া ফিরিতেছিল, শিখ ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে আপন দুর্জয় শক্তিকে পুঞ্জীভূত করিয়া তুলিতেছিল, মোগল-সম্রাটের রাজপ্রতিনিধিগণ সেই যুগান্তরের সন্ধ্যাকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহের রক্তধ্বজা আন্দোলন করিতেছিল— কেবল কয়েকজন ইংরাজ সওদাগর বাণিজ্যের বস্তা মাথায় করিয়া সম্রাটের প্রাসাদসোপানে প্রসাদচ্ছায়ায় অত্যন্ত বিনম্রভাবে আশ্রয় লইয়াছিল।

১২২