পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ইতিহাস

রাজ-দরবারে প্রতিবৎসর একঘেয়ে দরখাস্ত পেশ করিবার এই যে-সকল বিপুল আয়োজন ইহা ব্যর্থ; কারণ, সরকারের নিকট ইহা প্রতিষ্ঠাভাজন হইতে পারে নাই এবং দেশের অন্তরের মধ্যেও ইহার স্থায়ী প্রভাব প্রবেশ করিতেছে না।

 কিন্তু আমাদের অন্তরের মধ্যে শক্তিপুঞ্জ কেমন করিয়া অলক্ষ্যে কাজ করিতেছে তাহাই আমরা সর্বাপেক্ষা অল্প জানি। যখন অঙ্কুর বাহির হইয়া পড়ে তখনই বুঝিতে পারি, বাতাসে কখন বীজ উড়িয়া আসিয়া মনের উর্বর প্রদেশে স্থানলাভ করিয়াছিল।

 এই ইতিহাসবুভুক্ষা, ইহা একটি অঙ্কুর। বুঝিতেছি যে, কন্‌গ্রেস বৎসর বৎসর কেবল রাজপ্রাসাদে কতকগুলি বিফল দরখাস্ত বর্ষণ করে নাই, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশগুলিকে ক্রমশই ঘনিষ্ঠতর করিয়া আনিয়া আমাদের অন্তঃকরণের মধ্যে ভাবের বীজ বপন করিতেছে।

 দেশব্যাপী বৃহৎহৃৎস্পন্দন কিছুদিন হইতে আমরা যেন অনুভব করিতে আরম্ভ করিয়াছি। ব্যক্তিগত পল্লীগত বিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়া গিয়া আমাদের সুখদুঃখ, আমাদের মান-অপমান, আমাদের চিন্তা, আমাদের চেষ্টা ক্রমেই বৃহৎ পরিধি আশ্রয় করিতেছে। জড়ীভূত অহল্যা রামচন্দ্রের স্পর্শে যেমন ভূমিতল হইতে মূর্তি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান হইয়াছিল সেইরূপ। একেশ্বর ইংরাজ-শাসনের সংস্পর্শে আমাদের ভারতবর্ষ বিমিশ্র অস্পষ্ট বিচ্ছিন্ন জড়পুঞ্জমধ্য হইতে ক্রমশ এক মূর্তি গ্রহণ করিয়া দাঁড়াইয়া উঠিতেছে। জনহৃদয়ে সঞ্চরমাণ সেই-যে ঐক্যের বেগ, প্রাণের উচ্ছ্বাস, প্রীতির বন্ধনমুক্তি ও কর্তব্যের উদারতা-জনিত আনন্দ, তাহাই আমাদের উদ্যমকে জাগ্রত করিয়া তুলিয়াছে।

 এখন আমরা বোম্বাই মাদ্রাজ পঞ্জাবকে যেমন নিকটে পাইতে চাই

১৩৬