পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ঐতিহাসিক চিত্র

করিয়া আত্মহত্যার উদ্যোগ করিতেছে। নিজদেশ এবং পরদেশের প্রতি আমাদের আসক্তি ছিল না বলিয়া বিদেশীর নিকট আমরা দেশকে বিসর্জন দিয়াছি— নিজদেশ ও পরদেশের প্রতি আসক্তি সযত্নে পোষণ করিয়া য়ুরোপ আজ কোন্ রক্তসমুদ্রের তীরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে! অস্ত্রে শস্ত্রে সর্বাঙ্গ কণ্টকিত করিয়া তুলিয়া তাহার এ কী বিকট মূতি! কী সন্দেহ ও কী আতঙ্কের সহিত য়ুরোপের প্রত্যেক রাজশক্তি পরস্পরের প্রতি ক্রুর কটাক্ষপাত করিতেছে! রাজমন্ত্রীগণ টিপিয়া টিপিয়া পরস্পরের মৃত্যুচাল চালিতেছে; রণতরীসকল মৃত্যুবাণে পরিপূর্ণ হইয়া পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রে যমদৌত্যে বাহির হইয়াছে। আফ্রিকায় আসিয়ায় য়ুরোপের ক্ষুধিত লুব্ধগণ আসিয়া ধীরে ধীরে এক-এক পা বাড়াইয়া একটা থাবায় মাটি আক্রমণ করিতেছে এবং আর-একটা থাবা সম্মুখের লোলুপ অভ্যাগতের প্রতি উদ্যত করিতেছে। য়ুরোপীয় সভ্যতার হিংসা ও লোভে অদ্য পৃথিবীর চারি মহাদেশ ও দুই মহাসমুদ্র ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে। ইহার উপর আবার মহাজনদের সহিত মজুরদের, বিলাসের সহিত দুর্ভিক্ষের, দৃঢ়বদ্ধ সমাজনীতির সহিত সোশ্যালিজুম্ ও নাইহিলিজ্‌ম্‌’এর দ্বন্দ্ব য়ুরোপের সর্বত্রই আসন্ন হইয়া রহিয়াছে। প্রবৃত্তির প্রবলত, প্রভুত্বের মত্ততা, স্বার্থের উত্তেজনা কোন কালেই শান্তি ও পরিপূর্ণতায় লইয়া যাইতে পারে না। তাহার একটা প্রচণ্ড সংঘাত, একটা ভীষণ রক্তাক্ত পরিণাম আছেই। অতএব য়ুরোপের রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শকে চরম আদর্শ বিবেচনাপূর্বক তদ্বারা ভারতবর্ষকে মাপিয়া খাটো করিয়া ক্ষোভ পাইবার হয়তো প্রয়োজন নাই। একটা কথা আছে: জীর্ণমন্নং প্রশংসীয়াৎ।

 যেমন করিয়াই হউক এখন ভারতবর্ষকে আর পরের চোখে দেখিয়া আমাদের সান্ত্বনা নাই। কারণ, ভারতবর্ষের প্রতি যখন আমাদের প্রীতি

১৩৯