পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ‘আমার মনে হইল যে, প্রাচীন ভারতের রহস্যপূর্ণ ইতিহাসের নানা রঙের বহিরাবরণের মধ্য হইতে মস্তক উত্তোলন করিয়া তাহার ভিতরের কথাটি যাহা এতদিন সহস্র চেষ্টা করিয়াও আলোকাভাবে আপনাকে প্রকাশ করিতে পারিয়া উঠিতেছিল না, এইবার তাহার সে চেষ্টা বাঞ্ছানুরূপ সাফল্য লাভ করিবে তাহার অরুণোদয় দেখা দিয়াছে••• ভারতের প্রকৃত ইতিহাসের এই যে একটা সম্ভবমতো পাকা রকমের গোড়াপত্তন হইল, ইহা বঙ্গসরস্বতীর ভক্ত সন্তানদিগের কত না আনন্দের বিষয়’

 ঐরূপ ভূমিকার পর, রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের প্রসঙ্গক্রমে দ্বিজেন্দ্রনাথ আরও যাহা লেখেন তাহার প্রধান অংশ পরে সংকলিত হইল—

 ‘মহাদেবের আদিম পীঠস্থান দক্ষিণ অঞ্চলে কি উত্তর অঞ্চলে?

 ‘রবীন্দ্রনাথের লেখার আভাসে আমার এইরূপ মনে হয় যে, তাহার মতে মহাদেবের আদিম পীঠস্থান দক্ষিণ অঞ্চলে। তিনি যাহা আঁচিয়াছেন তাহা একেবারেই অমূলক বলিয়া উড়াইয়া দিবার কথা নহে, যেহেতু বাস্তবিকই রাক্ষসাদি ক্রুর জাতিদিগের মধ্যে বিষ্ণুর স্নিগ্ধমূর্তি উপাস্য দেবতার আদর্শ পদবীতে স্থান পাইবার অনুপযুক্ত; দুর্দান্ত রাক্ষস জাতিদিগের মনোরাজ্যের সিংহাসন শিবের রুদ্রমূর্তিরই উপযুক্ত অধিষ্ঠানমঞ্চ। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও আমরা দেখিতে পাই যে, এক দিকে যেমন রক্ষ, আর-এক দিকে তেমনি যক্ষ। প্রাচীন ভারতের দক্ষিণ অঞ্চল যেমন রক্ষদিগের দলবলের প্রধান সংগমস্থান (headquarter) ছিল— উত্তর অঞ্চল তেমনি যদিগের দলবলের প্রধান সংগমস্থান ছিল। ভারতবর্ষীয় আর্যদিগের চক্ষে দক্ষিণের দ্রাবিড়াদি জাতিরা যেমন রাক্ষস-বানরাদি মূর্তি ধারণ করিয়াছিল, উত্তরের মোগলাদি জাতিরা তেমনি যক্ষ-কিন্নরাদি মূর্তি ধারণ করিয়াছিল—ইহা দেখিতেই পাওয়া যাইতেছে। বিকটাকার-বিষয়ে

[ ৩ ]