পাতা:ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

শিবাজী ও গুরু গােবিন্দসিংহ

 আর, যে মহারাজ কৃতকার্যতার আদর্শস্থল— শিখদের চিরন্তন শত্রুকে যিনি দমন করিয়াছিলেন, কোনো পরাভবেই যাহার ইচ্ছাকে নিরস্ত করিতে পারে নাই— এক দিকে মোগলরাজ্যাবসান ও অন্য দিকে ইংরেজ-অভ্যুদয়ের সন্ধ্যাকাশকে যাহার আকস্মিক প্রতাপ রক্তরশ্মিতে রঞ্জিত করিয়া তুলিয়াছিল, তিনি শিখদের মধ্যে কী রাখিয়া গেলেন? অনৈক্য, অবিশ্বাস, উচ্ছৃঙ্খলতা।

 শিখদের যাহারা নায়ক ছিল তাহারা এই কৃতকার্য রাজার দৃষ্টান্তে ইহাই শিখিয়াছিল, জোর যার মুলুক তার। তাহারা ত্যাগ শিখিল না, আত্মসমর্পণ শিখিল না, ‘যতোধর্মস্ততোজয়ঃ’ এ মন্ত্র ভুলিয়া গেল, অর্থাৎ দীনহীন নানক যে শক্তি দ্বারা তাহাদিগকে বাঁধিয়াছিলেন, মহাপ্রতাপশালী মহারাজ তাহাতে আগুন লাগাইয়া দিলেন এবং ইতিহাসের আকাশে শিখ-জ্যোতিষ্ক ক্ষণকালের জন্য জ্বলিয়া ক্ষণকালের মধ্যে নিবিয়া গেল।

 আজ শিখের মধ্যে আর কোনো অগ্রসর-গতি নাই। তাহারা একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ে বাঁধিয়া গেছে; তাহারা আর বাড়িতেছে না; তাহাদের মধ্যে বহু শতাব্দকালেও আর কোনো মানবগুরুর আবির্ভাব হইল না— জ্ঞানে ধর্মে কর্মে মানবের ভাণ্ডারে তাহারা কোনো নূতন সম্পদ সঞ্চিত করিল না।

 নানক-শিষ্যেরা আজ যুদ্ধ করিতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তাহার শিষ্যদল ফৌজে ঢুকিয়া কখনো কাবুলে, কখনো চীনে, কখনো আফ্রিকায় লড়াই করিয়া বেড়াইবে, নানকের ধর্মতেজে উদ্দীপ্ত উত্তরবংশীয়দের এই পরিণামই যে গৌরবজনক, এমন কথা আমরা মনে করিতে পারি না। মনুষ্যত্বের উদার ক্ষেত্রে তাহার কেবল বারিকে বসিয়া কুচকাওয়াজ করিবে এজন্য নানক জীবন উৎসর্গ করেন নাই।

৬৫