পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W.

এই ভাবিতে ভাবিতে আমি ক্ষণেক পরে, অমুভবে বুঝিলাম যে, লোকজন তফাৎ গিয়াছে। আমি তখন সাহস পাইয়া অল্প দ্বার খুলিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম, বাহকের সকলে দোকানের সম্মুখে এক বটবৃক্ষতলে বসিয়া জলপান খাইতেছে। সেই স্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা। দেখিলাম যে, সম্মুখে অতি নিবিড় মেঘের স্বায় বিশাল দীর্ঘিকা বিস্তৃত রহিয়াছে, চারি পার্থে পর্ব্বতশ্রেণীবৎ উচ্চ অথচ সুকোমল শুামল তৃণাবরণশোভিত “পাহাড়,”—পাহাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীর্ঘ বটবৃক্ষশ্রেণী ; পাহাড়ে অনেক গোবৎস চরিতেছে—জলের উপর জলচর পক্ষিগণ ক্রীড়া করিতেছে—মৃদ্ধ পবনের মৃদু মৃদ্ধ তরঙ্গহিল্লোলে স্ফটিক ভঙ্গ হইতেছে—স্কুদ্রোর্ম্মিপ্রতিঘাতে কদাচিৎ জলজপুষ্পপত্র এবং শৈবাল ফুলিতেছে। দেখিতে পাইলাম যে, আমার দ্বারবানের জলে নামিয়া স্বান করিতেছে—ভাহাদের অঙ্গচালনে তাড়িত হইয়া শু্যামসলিলে শ্বেত মুক্তাহার বিক্ষিপ্ত হইতেছে। আকাশ পানে চাহিয়া দেখিলাম, কি সুন্দর নীলিমা ! কি সুন্দর শ্বেতমেঘের স্তর পরস্পরের মূর্ত্তিবৈচিত্র্য—কিবা নভস্তলে উড্ডীন ক্ষুদ্র পক্ষী সকলের নীলিমামধ্যে বিকীর্ণ কৃষ্ণবিন্দুনিচয়তুল্য শোভা । মনে মনে হইল, এমন কোন বিদ্যা নাই কি, যাতে মানুষ পার্থী হইতে পারে পাখী হইতে পারিলে আমি এখনই উড়িয়া চিরবাঞ্ছিতের নিকট পৌছিতাম । or আবার সরোবর প্রতি চাহিয়া দেখিলাম—এবার একটু ভীত হইলাম, দেখিলাম যে, বাহকের ভিন্ন আমার সঙ্গের লোক সকলেই এককালে স্বানে নামিয়াছে। সঙ্গে জুই জন স্ত্রীলোক—এক জন শ্বশুরবাড়ীর, এক জন যাপের বাড়ীর, উভয়েই জলে । আমার মঙ্গে একটু ভয় হইল—কেহ নিকটে নাই—স্থান মন্দ, ভাল করে নাই। কি করি, আমি কুলবধু, মুখ ফুটিয়া কাহাকে ডাকিতে পারিলাম না। এমত সময়ে পান্ধীর অপর পার্শ্বে কি একটা শব্দ হইল। যেন উপরিস্থ বটবৃক্ষের শাখা হইতে কিছু গুরুপদার্থ পড়িল । আমি সে দিকের কপাট অল্প খুলিয়া দেখিলাম । দেখিলাম যে, একজন কৃষ্ণবর্ণ বিকটাকার মন্তব্য । ভয়ে দ্বার বন্ধ করিলাম ; কিন্তু তখনই বুঝিলাম যে, এ সময়ে দ্বার খুলিয়া রাখাই ভাল। কিন্তু আমি পুনশ্চ দ্বার খুলিবার পূর্বেই আর একজন মানুষ গাছের উপর হইতে লাফাইয়া পড়িল । দেখিতে দেখিতে আর একজন, আবার একজন । এইরূপ চারি জন প্রায় এককালেই গাছ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পান্ধী কাধে করিয়া উঠাইল। উঠাইয়৷ উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিল।