সপ্তম পরিচ্ছেদ বিৰাহের পর পঞ্চমাষাচের শুক্ল পঞ্চমী আসিয়া উপস্থিত হইল। হিরন্ময়ী এ কথা শ্বরণ করিয়া সন্ধ্যাকালে বিমনা হইয়া বসিয়াছিলেন। ভাবিতেছিলেন, “গুরুদেবের আজ্ঞানুসারে আমি কালি হইতে অঙ্গুরীয়টি পরিতে পারি। কিন্তু পরিব কি ? পরিয়া আমার কি লাভ ? হয়ত স্বামী পাইব, কিন্তু স্বামী পাইবার আমার বাসনা নাই। অথবা চিরকালের জন্য কেনই বা পরের মূর্ত্তি মনে আঁকিয়। রাখি ! এ ছরস্তু হৃদয়কে শাসিত করাই উচিত। নহিলে ধর্ম্মে পতিত হইতেছি।” এমন সময়ে অমল। বিস্ময়বিহ্বল হইয়া আসিয়া কহিল, “কি সর্ব্বনাশ ! আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। না জানি কি হইবে।” হি। কি হইয়াছে ? অ। রাজপুরী হইতে তোমার জন্য শিবিক লইয়। দাস-দাসী আসিয়াছে। তোমাকে লইয়। যাইবে। হি। তুমি পাগল হইয়াছ । আমাকে রাজবাড়ী হইতে লইতে আসিবে কেন ? এমন সময়ে রাজদূতী আসিয়া প্রণাম করিল এবং কহিল যে, “রাজাধিরাজ পরম ভট্টারক শ্রীমদনদেবের আজ্ঞ যে, হিরন্ময়ী এই মুহূর্তেই শিবিকারোহণে রাজাবরোধে যাইবেন ।” হিরন্ময়ী বিস্মিত হইলেন। কিন্তু অস্বীকার করিতে পারিলেন না। রাজাজ্ঞ। অলঙ্ঘ্য। বিশেষ রাজা মদনদেবের অবরোধে যাইতে কোন শঙ্কা নাই। রাজ পরমধার্ম্মিক এবং জিতেন্দ্রিয় বলিয়া খ্যাত। তাহার প্রতাপে কোন রাজপুরুষও কোন স্ত্রীলোকের উপর কোন অত্যাচার করিতে পারে না। হিরন্ময়ী অমলাকে বলিলেন, “অমলে, আমি রাজদর্শনে যাইতে সন্মত। তুমি সঙ্গে চল ।” - অমলা স্বীকৃত হইল। 象 তৎসমভিব্যাহারে শিবিকারোহণে হিরন্ময়ী রাজবিরোধমধ্যে প্রৰিষ্ট হইলেন। প্রতিহারী রাজাকে নিবেদন করিল যে, শ্রেষ্ঠিকক্ষ আসিয়াছে। রাজাজ্ঞ পাইয়া প্রতিহারী এক হিরন্ময়ীকে রাজসমক্ষে লইয়া আসিল । আমলা বাহিরে রহিল।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২১
অবয়ব