ইন্দিরা مR রাখিয়াছিলাম যে “সাহেব সুবো” দরের একটা কি জিনিস—আমি তখন পাড়াগেয়ে মেয়ে। দেখিলাম, তা নয়—একটি স্ত্রীলোক-দেখিবার মত সামগ্রী। অনেক দিন এমন ভাল সামগ্রী কিছু দেখি নাই। মানুষটি আমারই বয়সী হইবে । রঙ আমা অপেক্ষ যে ফরস তাও নয়। বেশভূষা এমন কিছু নয়, কানে গোটাকতক মাকড়ি, হাতে বাল, গলায় চীক, একখানা কালাপেড়ে কাপড় পর । তাতেই দেখিবার সামগ্রী। এমন মুখ দেখি নাই। যেন পদ্মটি ফুটিয়া আছে—চারিদিক্ হইতে সাপের মত কোকড়া চুলগুলা ফণা তুলিয়া পদ্মটা ঘেরিয়াছে। খুব বড় বড় চোখ—কখন স্থির, কখন হাসিতেছে । ঠোঁট ছুইখানি পাতল রাঙ্গ টুকটুকে ফুলের পাপড়ির মত উল্টান, মুখখানি ছোট, সবশুদ্ধ যেন একটি ফুটন্ত ফুল। গড়ন পিটন কি রকম, তাহ ধরিতে পারিলাম না। আমগাছের যে ডাল কচিয়া যায়, সে ডাল যেমন বাতাসে খেলে, সেই রকম তাহার সর্বাঙ্গ খেলিতে লাগিল— যেমন নদীতে ঢেউ খেলে, তাহার শরীরে তেমনই কি একটা খেলিতে লাগিল—আমি কিছু ধরিতে পারিলাম না, তার মুখে কি একটা যেন মাথান ছিল, তাহাতে আমাকে যাহূ করিয়া ফেলিল। পাঠককে স্মরণ করিয়া দিতে হইবে না যে, আমি পুরুষ মানুষ নহি—মেয়ে মানুষ-নিজেও এক দিন একটু সৌন্দর্য্যগৰ্বিবতা ছিলাম। সুবোর সঙ্গে একটি তিন বছরের ছেলে—সেটিও তেমনি একটি আধফুটন্ত ফুল। উঠিতেছে, পড়িতেছে, বসিতেছে, খেলিতেছে, হেলিতেছে, ফুলিতেছে, নাচিতেছে, দৌড়াইতেছে, হাসিতেছে, যকিতেছে, মারিতেছে, সকলকে আদর করিতেছে। : আমি অনিমেষলোচনে সুবোকে ও তার ছেলেকে দেখিতেছি দেখিয়া, কৃষ্ণদাস বাবুর গৃহিণী চটিয়া উঠিয়া বলিলেন, “কথার উত্তর দাও না যে—ভাব কি ?” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “উনি কে ?” ' গৃহিণী ঠাকুরাণী ধমকাইয়া বলিলেন, “তাও কি বলিয়া দিতে হইবে ? ও সুবো, আর কে ?” তখন সুবো একটু হাসিয়া বলিল, “তা মাসাম, একটু বলিয়া দিতে হয়, বৈ কি ? উনি নূতন লোক, আমায় ত চেনেন না।” এই বলিয়া মুবো আমার মুখপানে চাহিয়া বলিল, “আমার নাম সুভাষিণী গো—ইনি আমার মালীম, আমাকে ছেলেবেলা থেকে ওঁর সুবো বলেন ।” তার পর কথার সূত্রট। গৃহিণী নিজ হস্তে তুলিয়া লইলেন। যলিলেন, “কলিকাতার রামরাম দত্তের ছেলের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে । তার বড় মানুষ। ছেলেবেল
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪
অবয়ব