নবম পরিচ্ছেদ : পাকাচুলের মুখ স্থখ * গৃহিণী বলিলেন, “বটে, এমন আশ্চর্য্য আরক ত কখন শুনি নাই। গুলি, মাখাও দেখি । দেখিও কলপ দিও না যেন।" - - * * * আমি উত্তম করিয়া তাহার চুলে কলপ মাখাইয়া দিলাম। দিয়া, “পাকা চুল জার নাই, বলিয়া চলিয়া গেলাম। নিয়মিত সময় উত্তীর্ণ হইলে তাহার সমস্ত চুলগুলি কাল হইয়া গেল । তুর্ভাগ্যবশতঃ হারাণী ঘরবীট দিতে দিতে তাহ দেখিতে পাইল । তখন সে ঝাটা ফেলিয়া দিয়া, মুখে কাপড় গুজিয়া হাসিতে হাসিতে সদর-বাড়ী চলিয়া গেল । সেখানে “কি ঝি ? কি ঝি ?” এই রকম একটা গোলযোগ হইলে, সে আবার ভিতর বাড়ীতে আসিয়া, মুখে কাপড় গুজিতে গুজিতে ছাদের উপর চলিয়া গেল। সেখানে সোনার মা চুল শুকাইতেছিল ; সে জিজ্ঞাসা করিল, “কি হয়েছে ?” হারাণী হাসির জালায় কথা কহিতে পারিল না ; কেবল হাত দিয়া মাথা দেখাইতে লাগিল । সোনার মা কিছু বুঝিতে না পারিয়া, নীচে আসিয়া দেখিল যে, গৃহিণীর মাথার চুল সব কালে—সে ফুকুরিয়া কাদিয়া উঠিল। বলিল, “ও মা ! এ কি হলো গো ! তোমার মাথার সব চুল কালে৷ হয়ে গেছে গো ! ওমা কে না জানি তোমায় ওষুধ করিল।” এমন সময় স্বভাষিণী আসিয়া আমাকে পাকড়াইল—হাসিতে হাসিতে বলিল, “পোড়ারমুখী, ও করেছ কি, মার চুলে কলপ দিয়াছ ?” আমি । হু । স্বভা। তোমার মুখে আগুন ! কি কাণ্ডখানা হয় দেখ ! আমি । তুমি নিশ্চিন্ত থাক । এমন সময়ে গৃহিণী স্বয়ং আমাকে তলব করিলেন। বলিলেন, “হঁ গা ফুমো ! ভূমি কি আমার মাথায় কলপ দিয়াছ ?” দেখিলাম, গৃহিণীর মুখখান বেশ প্রসন্ন। আমি বলিলাম, “আমন কথা কে বল্পে ম৷ ” গৃ । এই যে সোনার মা বলছে ! আমি। সোনার মার কি ? ও কলপ নয় মা, আমার ওষুধ । গৃ । তা বেশ ওষুধ বাছ । আরসি একখানা আন দেখি । একখানা আরসি অনিয়া দিলাম। দেখিয়া গৃহিণী বলিলেন, “ও মা, সব চুঙ্গ কালে হয়ে গেছে ! আঃ, আবাগের বেটী, লোকে এখনই বলবে কলপ দিয়েছে ।” গৃহিণীর মুখে হাসি ধরে না। সে দিন সন্ধ্যার পর আমার রায়ার মুখ্যাতি করিয়া আমার বেতন বাড়াইয়া দিলেন। আর বলিলেন, “বাছা ! কেবল কাচের চুরি হাতে দিয়া
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৯
অবয়ব