পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§§ हैनिद्रा হইতে তাহাকে দেখিতেছিলাম, এমত সময়ে তিনি মুখ তুলিলেন—দেখিতে পাইলেন যে, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে র্তাহার প্রতি চাহিয়া আছি। আমি ত জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছাপূর্বক তাহার প্রতি কোন প্রকার কুটিল কটাক্ষ করি নাই। তত পাপ এ হৃদয়ে ছিল না। তবে সাপও বুঝি, জানিয়া শুনিয়া, ইচ্ছা করিয়া ফণা ধরে না ; ফণা ধরিবার সময় উপস্থিত হইলেই ফণা আপনি ফাপিয় উঠে । সাপেরও পাপহৃদয় ন হইতে পারে। বুঝি সেইরূপ কিছু ঘটিয়া থাকিবে। বুঝি তিনি একটা কুটিল কটাক্ষ দেখিয়া থাকিবেন। পুরুষ বলিয়া থাকেন যে, অন্ধকারে প্রদীপের মত, অবগুণ্ঠনমধ্যে রমণীর কটাক্ষ অধিকতর তীব্র দেখায়। বোধ হয়, ইনিও সেইরূপ দেখিয়া থাকিবেন। তিনি একটু মাত্র মৃদু হাসিয়া, মুখ নত করিলেন। সে হাসি কেবল আমিই দেখিতে পাইলাম। আমি সমুদয় মাংস তাহার পাতে ফেলিয়া দিয়া চলিয়া আসিলাম । আমি একটু লজ্জিত, একটু অসুখী হইলাম। . আমি সধবা হইয়াও জন্মবিধবা । বিবাহের সময়ে একবার মাত্র স্বামিসন্দর্শন হইয়াছিল—সুতরাং যৌবনের প্রবৃত্তি সকল অপরিতৃপ্ত ছিল। এমন গভীর জলে ক্ষেপণীনিক্ষেপে বুঝি তরঙ্গ উঠিল ভাবিয়া বড় অপ্রফুল্প হইলাম। মনে মনে নারীজন্মে সহস্র ধিক্কার দিলাম ; মনে মনে আপনাকে সহস্ৰ ধিক্কার দিলাম ; মনের ভিতর মরিয়া গেলাম । পাকশালায় ফিরিয়া আসিয়া আমার যেন মনে হইল, আমি ইহাকে পূর্বে কোথাও দেখিয়াছি। সন্দেহভঞ্জনার্থ, আবার অন্তরাল হইতে ইহাকে দেখিতে গেলাম। বিশেষ করিয়া দেখিলাম। দেখিয়া মনে মনে বলিলাম, “চিনিয়াছি।” o এমন সময়ে রামরাম বাবু, আবার অন্যান্ত খাদ্য লইয়া যাইতে ডাকিয়া বলিলেন । অনেক প্রকার মাংস পাক করিয়াছিলাম-লইয়া গেলাম। দেখিলাম, ইনি সেই কটাক্ষটি মনে করিয়া রাখিয়াছেন। রামরাম দত্তকে বলিলেন, “রামরাম বাবু, আপনার পাচিকাকে বলুন যে, পাক অতি পরিপাটি হইয়াছে।” রামরাম ভিতরের কথা কিছু বুঝিলেন না, বলিলেন, “ই, উনি রাখেন ভাল।” আমি মনে মনে বলিলাম, “তোমার মাথামুণ্ড রাধি।” - নিমন্ত্রিত বাবু কহিলেন, “কিন্তু এ বড় আশ্চর্য্য যে, আপনার বাড়ীতে দুই একখানা ব্যঞ্জন আমাদের দেশের মত পাক হইয়াছে।” আমি মনে মনে ভাবিলাম, “চিনিয়াছি।” বস্তুতঃ দুই একখানা ব্যঞ্জন আমাদের নিজদেশের প্রথামত পাক করিয়াছিলাম ।