& e. ইন্দির আমি তখন এক টুকরা কাগজে লিখিলাম, “আমি আপনাকে মনঃপ্রাণ সমর্পণ করিয়াছি । গ্রহণ করিবেন কি ? যদি করেন, তবে আজ রাত্রিতে এই বাড়ীতে শয়ন করিবেন। ঘরের দ্বার যেন খোলা থাকে। সেই পাচিকা ।” পত্র লিখিয়া, লজ্জায় ইচ্ছা করিতে লাগিল, পুকুরের জলে ডুবিয়া থাকি, কি অন্ধকারে লুকাইয়া থাকি। তা কি করিব ? বিধাতা যেমন ভাগ্য দিয়াছেন। বুঝি আর কখন • কোন কুলবতীর কপালে এমন তুর্দশা ঘটে নাই। কাগজটা মুড়িয়া মুড়িয়া হারাণীকে দিলাম। বলিলাম, “একটু সবুর।” স্বভাষিণীকে বলিলাম, “একবার দাদা বাবুকে ডাকিয়া পাঠাও। যাহা হয়, একটা কথা বলিয়া বিদায় দিও।” স্বভাষিণী তাই করিল। রমণ বাবু উঠিয়া আসিলে, হারাণীকে বলিলাম, “এখন যা ।” হারাণী গেল, কিছু পরে কাগজটা ফেরত দিল। তার এক কোণে লেখা আছে, “আচ্ছ।” আমি তখন হারাণীকে বলিলাম, “যদি এত করিলি, তবে আর একটু করিতে হইবে । ছপর রাত্রে আমাকে তার শুইবার ঘরটা দেখাইয়৷ দিয়া আসিতে হইবে।” হারাণী। আচ্ছ, কোন দোষ নাই ত ? 劍 আমি । কিছু না । উনি আর জন্মে আমার স্বামী ছিলেন। হারাণী। আর জন্মে, কি এ জন্মে, ঠিক বুঝিতে পারিতেছি না। আমি হাসিয়া বলিলাম, “চুপ।” হারাণী হাসিয়া বলিল, “যদি এ জন্মের হন, তবে আমি পাঁচ শত টাকা বখশিশ নিব । মহিলে আমার বাটার ঘা ভাল হইবে না ।” ஆ: আমি তখন স্বভাষিণীর কাছে গিয়া এ সকল সংবাদ দিলাম। স্বভাষিণী শাশুড়ীকে বলিয়া আসিল, “আজি কুমুদিনীর অসুখ হইয়াছে ; সে রাধিতে পরিবে না। সোনার মাই রাধুক।” সোনার মা রাধিতে গেল—সুভাষিণী আমাকে লইয়া গিয়া ঘরে কবাট দিল । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “এ কি, কয়েদ কেন ? সুভাষিণী বলিল, “তোমায় সাজাইব ।” তখন আমার মুখ পরিষ্কার করিয়া মুছাইয়া দিল । চুলে সুগন্ধ তৈল মাখাইয়া, যন্ধে খোপা বাধিয়া দিল ; বলিল, “এ খোপার হাজার টাকা মূল্য, সময় হইলে আমায় এ হাজার টাকা পাঠাইয়া দিস।” তার পর আপনায় একখানা পরিষ্কার, রমণীমনোহর বস্ত্র লইয়৷ জোর করিয়া পরাইতে লাগিল । সে যেরূপ টানাটানি করিল, বিবস্ত্রী হইবার ভয়ে আমি
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৪
অবয়ব