*8 ३ ईमिब्रां তাই আঁচলে বাধিয়া লইয়া যাইতেছিলাম। একটা কবির কাব্য, অপরটা ধনীর ধন । ধনীর ধন কবির কাব্যের সমান কি ? যাহারা ধনোপার্জন করিয়া বুড়া হইয়াছে, কাব্য হারাইয়াছে, তাহারাও এ কথা বলে না। তাহারা বলে, ফুল যতক্ষণ গাছে ফুটে, ততক্ষণই সুন্দর ; তুলিলে আর তেমন সুন্দর থাকে না । স্বপ্ন যেমন সুখের, স্বপ্নের সফলতা কি তত মুখের হয় ? আকাশ যেমন বস্তুতঃ নীল নয়, আমরা নীল দেখি মাত্র, ধন তেমনই। ধন সুখের নয়, আমরা মুখের বলিয়া মনে করি। কাব্যই মুখ । কেন না, কাব্য আশা, ধন ভোগমাত্র । তাও সকলের কপালে নয়। অনেক ধনী লোক কেবল ধনাগারের প্রহরী মাত্র। আমার একজন কুটুম্ব বলেন, “ত্রেজুরি গার্ড।” তবু সুখে মুখেই শ্বশুরবাড়ী চলিলাম। সেখানে, এবার নির্বিবয়ে পৌছিলাম। স্বামী মহাশয়, মাতাপিতার সমীপে সমস্ত কথা সবিশেষে নিবেদন করিলেন। রমণ বাবুর পুলিন্দা খোলা হইল। তাহার কথার সঙ্গে আমার সকল কথা মিলিল। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ী সন্তুষ্ট হইলেন। সমাজের লোকেও সবিশেব বৃত্তাস্ত জানিতে পারিয়া, কোন কথা তুলিল না। আমি সকল ঘটনা বিবৃত করিয়া, সুভাষিণীকে.পত্র লিখিলাম। সুভাষিণীর জন্য সর্ব্বদা আমার প্রাণ র্কাদিত । আমার স্বামী আমার অনুরোধে রমণ বাবুর নিকট হারাণীর জন্ত পাচ শত টাকা পাঠাইয়া দিলেন। শীঘ্রই সুভাষিণীর উত্তর পাইলাম। উত্তর আনন্দপরিপূর্ণ। স্বভাষিণী, র-বাবুর হস্তাক্ষরে পত্র লিখিয়াছিল। কিন্তু কথাগুলা সুভাষিণীর নিজের, তাহা কথার রকমেই বুঝা গেল। সে সকলেরই সংবাদ লিখিয়াছিল। ই একটা সংবাদ উদ্ধৃত করিতেছি। সে লিখিতেছে, “হারাণী প্রথমে কিছুতেই টাকা লইবে না। বলে, আমার লোভ বাড়িয়া যাইবে । এটা যেন ভাল কাজই করিয়াছিলাম, কিন্তু এ রকম কাজ ত মন্দই হয়। আমি বদি লোভে পড়িয়া মন্দেই রাজি হই ? আমি পোড়ারমুখীকে বুঝাইলাম যে, আমার বাট না খাইলে কি তুই এ কাজ করিতিস ? সবার বেলাই কি তুই আমার হাতের বাট খেতে পাবি ? মন্দ কাজের বেল কি আমি তোকে তেমনই তোর সুধু মুখে ঝাটা খাওয়াইব । ফুটে থালাগালিও খাবি না কি ? ভাল কাজ করেছিলি, বফশিষ নে। এইরূপ অনেক বুঝান পড়ানতে সে টাকা নিয়াছে। এখন নানা রকম ব্রত নিয়ম করিবার ফর্দ করিতেছে। যত দিন না তোমার এই সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল, তত দিন সে আর হাসে নাই, কিন্তু এখন তার হাসির জালায় বাড়ীর লোক অস্থির হইয়াছে।” -
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৬
অবয়ব