প্রথম পরিচ্ছেদ আমি শ্বশুরবাড়ী যাইব অনেক দিনের পর আমি শ্বশুরবাড়ী যাইতেছিলাম। আমি উনিশ বৎসরে পড়িয়াছিলাম, তথাপি এ পর্য্যন্ত শ্বশুরের ঘর করি নাই। তাহার কারণ, আমার পিতা ধনী, শ্বশুর দরিদ্র। বিবাহের কিছু দিন পরেই শ্বশুর আমাকে লইতে লোক পঠাইয়াছিলেন, কিন্তু পিতা পাঠাইলেন না ; বলিলেন, “বিহাইকে বলিও যে, আগে আমার জামাতা উপার্জন করিতে শিখুক—তার পর বধু লইয়া যাইবেন—এখন আমার মেয়ে লইয়া গিয়া খাওয়াইবেন কি ?” শুনিয়া আমার স্বামীর মনে বড় ঘূণা জন্মিল—র্তাহার বয়স তখন কুড়ি বৎসর, তিনি প্রতিজ্ঞ করিলেন যে, স্বয়ং অর্থোপার্জন করিয়া পরিবার প্রতিপালন করিবেন। এই ভাবিয়া তিনি পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রা করিলেন। তখন রেইল হয় নাই—পশ্চিমের পথ । অতি দুৰ্গম ছিল। তিনি পদব্রজে, বিনা অর্থে, বিনা সহায়ে, সেই পথ অতিবাহিত করিয়া, পঞ্জাবে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যে ইহা পারে, সে অর্থোপার্জন করিতেও পারে। স্বামী অর্থে পার্জন করিতে লাগিলেন—বাড়ীতে টাকা পাঠাইতে লাগিলেন–কিন্তু সাত আট বৎসর বাড়ী আসিলেন না, বা আমার কোন সংবাদ লইলেন না। রাগে আমার শরীর গর গর করিত। কত টাকা চাই ? পিতা মাতার উপর বড় রাগ হইত—কেন পোড়া টাকা উপার্জনের কথা তাহারা তুলিয়াছিলেন ? টাকা কি আমার সুখের চেয়ে বড়। আমার বাপের ঘরে অনেক টাকা—আমি টাকা লইয়া “ছিনিমিনি” খেলিতাম। মনে মনে করিতাম, একদিন টাকা পাতিয়া শুইয়া দেখিব—কি মুখ ? একদিন মাকে বলিলাম, “ম, টাকা পাতিয়া শুইব।” মা বলিলেন, “পাগলী কোথাকার ” মা কথাটা বুঝিলেন। কি কল কৌশল করিলেন বলিতে পারি না, কিন্তু যে সময়ের ইতিহাস আরম্ভ করিতেছি, তাহার কিছু পূর্ব্বে আমার স্বামী বাড়ী আসিলেন। রব উঠিল যে, তিনি কমিসেরিয়েটের (কমিসেরিয়েট বটে ত ?) কর্ম্ম করিয়া অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিপতি হইয়া আসিয়াছেন। আমার শ্বশুর আমার পিতাকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “আপনার আশীর্ব্বাদে উপেন্দ্র ( আমার স্বামীর নাম উপেন্দ্র—নাম ধরিলাম, প্রাচীনারা মার্জনা করিবেন, হাল আইনে তাহাকে “আমার উপেন্দ্র” বলিয়া ডাকাই সম্ভব)—বধুমাতাকে প্রতিপালন করিতে সক্ষম। পান্ধী
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯
অবয়ব