পাতা:ইন্দিরা - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৩).pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইন্দিরা ।

হাঙ্গরের মুখ। দাসী মাগী যে আসিয়াছিল, সে গরদ পরিয়া আসিয়াছে, গলায় বড় মোটা সোনার দানা। চারিজন কালো দাড়িওয়ালা ভোজপুরে পাল্কীর সঙ্গে আসিয়াছিল।

 আমার পিতা হরমোহন দত্ত বুনিয়াদি বড়মানুষ। হাসিয়া বলিলেন, “মা, ইন্দিরে! আর তোমাকে রাখিতে পারি না। এখন যাও, আবার শীঘ্র লইয়া আসিব। দেখ, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ দেখিয়া হাসিও না।”

 তাই আমি শ্বশুর বাড়ী যাইতেছিলাম। আমার শ্বশুর বাড়ীমনোহরপুর। আমার পিত্রালয় মহেশপুর; উভয় গ্রামের মধ্যে দশ ক্রোশ পথ। সুতরাং প্রাতে আহার করিয়া যাত্রা করিয়াছিলাম, পৌঁছিতে পাঁচ সাত দণ্ড রাত্রি হইবে, জানিতাম।

 পথে কালাদীঘি নামে এক বৃহৎ দীর্ঘিকা আছে। তাহার জল প্রায় অর্দ্ধক্রোশ। পাহাড় পর্ব্বতের ন্যায় উচ্চ। তাহার ভিতর দিয়া পথ। চারি পার্শ্বে বট গাছ। তাহার ছায়া শীতল, জল নীলমেঘের মত, দৃশ্য অতি মনোহর। তথায় মনুষ্যের সমাগম বিরল। ঘাটের উপরে একখানি দোকান আছে মাত্র। নিকটে যে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালাদীঘি।