পাতা:ইসলামী ধর্মতত্ত্বঃ এবার ঘরে ফেরার পালা.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
এবার ঘরে ফেরার পালা।

 দুর্যোগের রাতে কোন নাবিকের পক্ষে নিজ গতিপথ থেকে বিচ্যুত হওয়া বা লক্ষ্যপথ থেকে ভ্রষ্ট হওয়া কোন বিচিত্র ব্যাপার নয় এবং দুর্যোগ পার হলে সেই নাবিক পুনরায় তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যপথে ফিরে আসবে অথবা ফিরে আসার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্যোগের পরেও সে যদি দম্ভভরে সেই বিচ্যুত পথটাকেই আসল পথ বলে দাবি করতে থাকে এবং সেইদিকেই অগ্রসর হতে থাকে তবে তাকে, আর যাই হােক, বুদ্ধিমান নাবিক বলা চলে না। সেই ভ্রষ্ট পথকে অনুসরণ করে সে যে এক ভুল ঠিকানায় উপনীত হবে তা বলাই বাহুল্য।

 এই কথাটি আজকের ভারতীয় উপমহাদেশের সমগ্র মুসলমান সমাজের পক্ষে একান্তভাবে প্রযােজ্য। বিদেশী মুসলমান আক্রমণকারীদের দ্বারা ভারত বিজয়ের পূর্বে এই দেশের মুসলমানদের সকলেই হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ ছিলেন এবং যেহেতু বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মেরই একটি শাখা মাত্র, তাই সেই হিসাবে সকলেই হিন্দু ছিলেন। মুসলমান শাসকদের দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়ে কিংবা প্রলােভনে প্ররােচিত হয়ে তাদের পূর্বপুরুষ মুসলমান হয়েছিলেন এটাই ইতিহাসের ঘটনা। উপরন্তু এ ঘটনা বেশীদিন আগের নয়। বিশেষ করে বাংলার ক্ষেত্রে তা ৭০০ বছরের বেশী কখনই হতে পারে না। কারণ:১২০৪ খ্রীস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজীর দ্বারা নওদীয় বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার মুসলমান শাসনের সূত্রপাত হলেও শ্রীরমেশচন্দ্র মজুমদারের ভাষায়, “এয়ােদশ শতাব্দীর শেষ দশকের আগে মুসলমানরা পূর্ববঙ্গের কোন অঞ্চল জয় করিতে পারে নাই। দক্ষিণবঙ্গের কোন অঞ্চলও মুসলমানদের দ্বারা ত্রয়ােদশ শতাব্দীতে বিজিত হয় নাই।” (বাংলাদেশের ইতিহাস, মধ্যযুগ, পৃঃ ২}। এরও প্রায় ১০০ বছর পরে রাজা গণেশের ধর্মান্তরিত পুত্র জালালুদ্দিন মহম্মদ শাহর শাসনকালের সময় থেকেই আজকের মুসলমান অধ্যুষিত পূর্ববাংলায় ধর্মান্তরকরণের কাজ ত্বরান্বিত হয়।

 কিন্তু তার আগে হাজার হাজার বছর আজকের সকল ধর্মান্তরিত মুসলমানই হিন্দু ছিলেন এবং হিন্দু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মধ্যেই লালিত-পালিত হয়েছিলেন। কাজেই নিঃসন্দেহে সেটাই তাদের মূল লক্ষ্যপথ। আজ তারা আরবী অথবা ফাসী নাম গ্রহণ করে, গােমাংস আহার করে এবং আরও