যারা অবিশ্বাস করে তাদের পরাজিত করে হত্যা কর।” আবু বকর ও ওসমান বাদে আর সবাইকেই তিনি বাহিনীতে সামিল হতে বললেন। এই প্রসঙ্গে নবীর প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য সম্বন্ধে দু একটা কথা বলা উচিত। আবু বকর ও ওসমান বাদে ঐ বাহিনীতে আলি, যুবায়ের, আব্বাস ইত্যাদি নেতৃস্থানীয় সকলেই ছিলেন এবং এই সব অভিজ্ঞ যোদ্ধারা ওসামার মত একজন নাবালকের নেতৃত্ব মেনে নিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা প্রকাশ করেননি। পরে অবশ্য কোন কোন ব্যক্তি তাদের উত্মা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু নবীর হস্তক্ষেপে তা তখনই মিটে যায়।
এর আগে নবীর তেমন কোন কঠিন অসুখ হয় নি। হিজরীর ৬ষ্ঠ বছরে সামান্য ক্ষুধামান্দ্য হয়েছিল যার কথা আগেই বলা হয়েছে এবং ইহুদীদের দ্বারা যাদু করা চুলের গিট খুলে দিতে তা চলে যায়। বর্তমান অসুস্থতার ব্যাপারে নবীর ধারণা জন্মায় যে খয়বর অভিযানকালে যে বিষ মেশানো মাংস খেয়েছিলেন সে বিষক্রিয়াই এর জন্য দায়ী। কিন্তু এ অনুমান সত্য কি মিথ্যা তার কোন প্রমাণ কোথাও নেই। তবে নবুয়ৎ প্রাপ্তির পর থেকে শুরু করে বিগত কুড়ি বছর ধরে তার শরীর ও মনের উপর দিয়ে যে ঝড় বয়ে গেছে তা কল্পনার বাইরে। মক্কার অবজ্ঞা, অত্যাচার তারপর মদিনায় হিজরৎ, যুদ্ধ, অভিযান এমন কি বর্তমানে তার সাম্রাজ্যের ক্রমাগত বিস্তারের ফলেও কাজের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া কোরানের বাণী অবতীর্ণ হবার সময়ও তার শরীর ও মনের উপর যে চাপ পড়ত তাও তার স্বাস্থ্যের অবনতির একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করতেন। একদিন আবু বকর নবীকে বলেন, ‘সুলল্লা, আপনার চুল মনে হচ্ছে অতি দ্রুত সাদা হয়ে যাচ্ছে।” জবাবে নবী বললেন, “হ্যা, আল্লার প্রত্যাদেশই আমার এই হাল করেছে।” নবী যেমন বয়সের ভারে কোনদিন কাবু হয়ে যাননি, তেমনি জরা যে তাকে ধীরে ধীরে। গ্রাস করার জন্য এগিয়ে আসছে তাও অবজ্ঞা করেননি। যখন অনেক দূর দূর থেকে দলপতিরা এসে তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করল তখন তিনি ১১০ নম্বর সুরা, “যখন আল্লার সাহায্য ও বিজয় আসবে, এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লার দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তুমি তোমার প্রতি পালকের প্রশংসা দ্বারা তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা কর, নিশ্চয় তিনি অধিকতর ক্ষমাশীল”—পাঠ করে বলতেন যে তার পার্থিব কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এখন তার যে কাজ বাকী আছে তা হল আল্লার প্রশংসা ও মহিমা কীর্তন করা।
কথিত আছে যে, উপরিউক্ত সুরা অবতীর্ণ হলে তিনি কন্যা ফতেমাকে ডেকে বলেন, “ফতেমা, আমার জাগতিক জীবন যে সমাপ্তির পথে সে খবর