পাতা:ইস্তাহার (বিশ্বজ্ঞান প্রকাশনী).pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাংবাদিক

যুদ্ধের দামামা বাজে। বাহিনী চলেছে ট্যাঙ্কে, কামান গর্জনে;
দুরন্ত বোমারু সেনা সুকৌশলে পাক খেয়ে নেমে এসে নীচে
কুশলী সাঁতারুর মতো অনায়াসে বোমা ফেলে যায়;
নগর বন্দর কাঁপে, জ্বলে লোকালয়, ঘর বাড়ী,
ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আতঙ্কের বিভীষিকা অন্তর কাঁপায়।
কখনও বা দিবালোকে গুপ্ত পরিখায় নেমে দ্রুত শুয়ে পড়ে
কাঁধে বাঁধা ক্যামেরাটা তুলে ধরে রোমাঞ্চকর জ্যান্ত ছবি তুলি,
চক্ষের নিমেষে এসে জীবন মৃত্যুর কত নাটকীয় ক্ষণ
আকস্মিক বিস্ময়ে লেন্সে নেগেটিভে চিরবন্দী হয়ে থাকে;
তারপর কালক্রমে ঐতিহাসিক তাকে অমরত্ব দেয়।

এ কথা তো ইতিহাস জানে না যে, তিল তিল করে
আমি সাংবাদিক নিত্য টেলিপ্রিণ্টারে রচি শত শত রক্তাক্ত কাহিনী;
এই সব খণ্ড খণ্ড অভিনব ইতিবৃত্ত সঞ্চয়ের দুঃসাহসিক আশায়
সৈনিকের উৎসাহে মারমুখো ফৌজের সঙ্গে পথ চলি।

প্রবল বন্যায় ভাসে গ্রাম নদী খাল বিল, অসংখ্য সংসার,
দিকে দিকে ছন্নছাড়া গৃহহারা অন্নহীন কঙ্কালের অশ্লীল মিছিল;
গরু মোষ ছাগলের ভাসমান অগনিত গলিত শবের উপরে
ভোজনবিলাসী কাক চিল শকুনের লোভী তীক্ষ্ণ চঞ্চু দুর্গন্ধ ছড়ায়;
এদিকে তাকিয়ে দেখি, ঘরের টিনের চালে বিড়ালের ছানা কেঁদে মরে।

জল, আরও জল, শুধু জল চারিদিকে। যা দেখেছি,
সব চিত্র সব কথা যায় না তো লেখা শুধু খবরের রূপে;
বন্যার মামুলি তথ্য পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ মারফত।
ঝড় আসে। গাছ পড়ে, ঘর ভাঙে, সেই সঙ্গে গণমৃত্যু আসে।
আকস্মিক দুর্ঘটনা আনে ক্ষয় ক্ষতি দুর্ভাবনা। দুর্ভিক্ষের প্রকোপে, অথবা
দেশব্যাপী নিদারুণ মহামারীর দুর্জয় বিপর্জয় লীলার রোমহর্ষক কাহিনী

২৭