পাতা:ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থাবলী.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের গ্রন্থাবলী।
৪৯


কলে আর ছলে বলে যত পার কর।
ফয়ে সে কিছুই নয়, মিছে বোকে মর।
শ্রীমান্‌ ধীমান্‌ নীতি-নির্ম্মাণকারক।”
যারা সবে হতে চান বিধবাতারক॥
নতভাবে নিবেদন প্রতি জনে জনে।
আইন-বৃক্ষের ফল ফলিবে কেমনে?
বিধবার বিয়ে দিতে যাহারা উদ্যত।
তার মাঝে বড় বড় লোক আছে যত॥
যারে ইচ্ছা তারে হয় ডাকিয়া আনিয়া।
ঘরেতে বিধবা কত পরিচয় নিয়া॥
গোপনেতে এই কথা বলিবেন তারে।
জননীর বিয়ে দিতে পারে কি না পারে?
যদি পারে তবে তারে বলি বাহাদুর।
এখনি করিলে সব দুঃখ হয় দূর॥
সহজে যদ্যপি হয় এরূপ ব্যাপার।
কলিতে হবে না তবে আইন প্রচার॥
যদি কেহ্ নাহি পারে সাহস ধরিয়া।
বিফল কি ফল তবে আইন করিয়া॥
পরম্পর আড়ম্বর মুখে কত কয়।
কেহ আর মাথা তুলে অগ্রসর নয়॥
গোলেমালে হরিবোল গণ্ডগোল সার।
নাহি হয় ফলোদয় মিছে হাহাকার॥
বাক্যের অভাব নাই বদনভাণ্ডারে।
যত আসে তত বলে কে দুষিবে কারে?
সাহস কোথায় বল প্রতিজ্ঞ কোথায়?
কিছুই না হতে পারে মুখের কথায়॥
মিছামিছি অনুষ্ঠানে মিছে কাল হরা।
মুখে বুলা বলা নয় কাজে করা করা॥
সকলেই তুড়ি মারে বুঝে নাকে কেউ।
সীমা ছেড়ে নাহি খেলে সাগরের ঢেউ॥
সাগর যদ্যপি করে সীমার লঙ্ঘন।
তবে বুঝি হতে পারে বিবাহঘটন॥
নচেৎ না দেখি কোন সম্ভাবনা আর।
অকারণে হই ইই উপহাস সার॥
কেহ কিছু নাহি করে আপনার ঘরে।
যাবে যাবে যায় শত্রু যাক পরে পরে॥
এখন এরূপ কবে হলে ব্যতিক্রম।
“ফাটায় পোড়েছে কলা গোবিন্দায় নম।”
রাজার কর্ত্তব্য কথা করিতে বর্ণন।
এরূপ লিখিয়া মার নাহি প্রয়োজন॥
এইমাত্র শেষ কথা কহিব নিশ্চয়।
এই বিষয়ে বিধি দে'য়া রাজধর্ম্ম নয়॥
মরুক্ মরুক্ বাদ প্রজায় প্রজায়।
কোন্ কালে রাজার কি হানি আছে তায়?




বিধবাবিবাহ।

বাধিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গোল।
বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়াছে ঢোল॥
কত বাদী প্রতিবাদী করে কত রব।
ছেলে বুড়ে আদি করি মাতিয়াছে সব॥
কেহ উঠে শাখাপরে কেহ থাকে মূলে।
করিছে প্রমাণ জড়ো পাঁজি পুথি খুলে॥
একদলে যত বুড়ো আর দলে ছোঁড়া।
গোঁড়া হয়ে মাতে সব, দেখেনাকো গোড়া।
লাফালাফি দাপাদাপি করিতেছে যত।
দুই দলে খাপাথাপি ছাপাছাপি কত॥
বচন রচন করি কত কথা বলে।
ধর্ম্মের বিচার-পথে কেহ নাহি চলে॥
“পরাশর"প্রমাণেতে বিধি বলে কেউ।
কেহ বলে এ যে দেখি সাগরের ঢেউ॥
কোথা বা করিছে লোক শুধু হেউ হেউ!
কোথা বা বাঘের পিছে লাগিয়াছে ফেউ॥
অনেকেই এইমত লতেছে বিধান।
“অক্ষতযোনির” বটে বিবাহ-বিধান॥
কেহ বলে ক্ষতাক্ষত কেবা আর বাছে?
একেবারে তরে যাক যত রাড়ী আছে।
কেহ কহ এই বিধি কেমনে হইবে?