পাতা:উপদেশ (প্রতাপচন্দ্র মজুমদার).djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ উপদেশ । জ্যোৎস্না যেমন সহজেই চিত্তকে আকর্ষণ করে, কুসুমের সুবাস যেমন বিনা আয়াসে নাসিকাতে প্রবেশ করে, তেমনি দেবচরিত্র অজানিতরূপে অজ্ঞাতভাবে অপর চরিত্রে সংক্রামিত হয়। ঈশ কিছুই বলিতেন না, অথচ তাহার চরিত্রের ছায়াতে কত শত দেবচরিত্র রচিত হইল । আমাদের অগ্রজ আচাৰ্য্য অধিক কথা বলিতেন না, অথচ তাহার নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে এমন সমস্ত কথা আসিত, যাহার দ্বারা আমরা সমস্ত বুঝিতাম । এই সমস্ত দেবাত্মগণের জীবনের অভ্যন্তর কত ঐশ্বৰ্য্যে, কত দেবপ্রসাদে পরিপূর্ণ ছিল, কিরূপে তাহ অনুভব করিব ? ইহাদের এত ছিল তথাপি উচ্ছৃঙ্খল হন নাই, তবে তোমার আমার দশা কেন এইরূপ হইল ? হৃদয়ে একটী কাণা কড়ি সঞ্চয় করিয়া রাখিতে পারি না। অন্তরের ভাব যত তাহ অপেক্ষা অধিক প্রকাশ করিতে যাইয়া একেবারে শূন্তপ্রাণ হই। যে বাণী নিঃশব্দে বেদ প্রণেতার কর্ণে প্রবেশ করিয়াছিল, যে বাণী গীতাকারে অন্তর পূর্ণ করিয়াছিল, সেই বাণী আমরা কবে শুনিব ? অন্তর যে ব্রহ্মবাণীতে পূর্ণ থাকিলে মানুষের এক কথাতে সমস্ত মণ্ডলী নিস্তব্ধ হয়, ভাবে ও ভক্তিতে পূর্ণ হয়, এবং অদৃশু অনন্ত রাজ্যের তাবৎ সমাচার লাভ করে, সেই বাণী অন্তরে সংগ্ৰহ করিয়া আমরা কবে উন্নত ধৰ্ম্মজীবন লাভ করিব ? হে সাধক, ধৰ্ম্মমণ্ডলীতে প্রবেশ করিয়া কত বক্তৃতা ও সঙ্গীত করিলে, ধৰ্ম্মলাভের জন্ত কতবার বারাণসী, মক্কা ও জেরুজিলাম ভ্রমণ করিলে, কিন্তু ব্ৰহ্মকে নিঃসন্দেহরূপে দেখিলে কই ? ব্রহ্মবাণী নিঃসন্দেহরূপে শুনিতে পাইলে কই ? বিশ্বাসীর জীবন কত শান্তিময় ! বিশ্বাসীর নিকট সকলই অস্তি, অস্তি, আর অবিশ্বাসীর নিকট সকলই নাস্তি, নাস্তি ।