পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০১৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

হইতে সাহস করেন না। অনেকে মনে করেন যে, গবর্ণমেণ্ট এজন্য তাহার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু তিনি গবর্ণমেণ্টের অনুরাগ বিরাগ তুচ্ছ করিয়া প্রকাশ্যভাবে দেশের লোকের রাজনৈতিক আকাঙ্খার সমর্থন করিয়াছেন। এ দুর্ভাগ্য দেশের প্রধান শত্রু ভয়,“রাজভয়, লোকভয়, সমাজভয়ে দেশের লোক অস্থির। মহারাজা সায়াজীরাও ইহার কোনো ভয়ই গ্রাহ্য করেন নাই। তোমরা হয়তো মনে করিতে পার, রাজার আবার ভয় কি? কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজাদেরই ভয়ের কারণ অধিক। বড় গাছেই বড় বাজ পড়ে। সামান্য লোকে যেসব কাজ করিলে কেহই কিছু বলে না, রাজা বা বড় লোকেরা তাহা করিলে সকলেরই দৃষ্টি তাহাতে আকৃষ্ট হয়। এই কারণে রাজা ও উচ্চপদস্থ লোকদিগকে সাবধানে চলিতে হয়। ভয়ের কারণ অধিক না থাকিলেও রাজাদের ভয় যে বেশি, তাহাতে আর সন্দেহ নাই। তাহার প্রমাণ, এই যে কোনো সৎসাহসের কার্যে তাহাদিগকে অগ্রসর দেখিতে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে মহারাজা সায়াজী রাও একমাত্র দৃষ্টান্তস্থল বলিলে অত্যুক্তি না। একদিকে তিনি যেমন রাজভয়কে তুচ্ছ কবি কংগ্রেস প্রভৃতি সাধারণ জনহিতকর কার্যে প্রকাশ্যভাবে যোগ দিয়াছেন, অপরদিকে তিনি সামাজিক ভয়ের মস্তকে পদাঘাত করিয়া সমুদ্রযাত্রা, বিদেশ ভ্রমণ প্রভৃতি সংস্কারে স্বয়ং দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করিয়াছেন। মহারাজা সায়াজী রাও একাধিকবাব ইউবোপ এবং আমেরিকা গমন করিয়াছেন! অল্পদিন হইল তিনি মহারাণীকে সঙ্গে লইয়া আমেরিকা ভ্রমণ কবিধা আসিয়াছেন। প্রকাশ্য সভাতে ব্রাহ্মণ, শূদ্র, খৃস্টান, মুসলমান প্রভৃতি সকলের সঙ্গে বসিয়া আহার করিয়াছেন। স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার, বিধবা বিবাহ প্রচলন, নিম্নশ্রেণীর লোেকদিগের অবস্থার উন্নতি প্রভৃতি সমাজ সংস্কারে তিনি অতিশয় উৎসাহী। তিনি বরোদা বাজো আইন দ্বারা বাল্যবিবাহ প্রথা দণ্ডনীয় করিয়াছেন। ইহাতে প্রজারা অনেক প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। বোধহয়, তিনি জনসাধারণের অপ্রিয়ও হইয়াছিলেন। কিন্তু লোকভয় অগ্রাহ্য করিয়া যাহা কল্যাণকর বোধ করিয়াছে তাহাই করিয়াছে। তাহাব সুশাসনে বরোদা রাজ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি হইয়াছে। দেশে শিক্ষা বিস্তার, ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠা, শিল্প বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি সাধন করিয়া তিনি জনসাধারণের গভীর শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছে।

 অপরদিকে তাহার চরিত্র এবং পারিবারিক জীবন আদর্শস্থানীয়। সাধারণত যে সকল দুনীতি সম্পদশালী ব্যক্তিদিগের চরিত্র কলঙ্কিত করে, মহারাজা সায়াজী রাওয়ের চরিত্রে তাহার ছায়াও স্পর্শ করে নাই। তিনি আদর্শ স্বামী এবং আদর্শ পিতা। নিজে যেমন আড়ম্বরশূন্য কর্মশীল জীবন যাপন করিতেছে, পুত্র কন্যাদিগকেও সেইপ্রকার শিক্ষা দিতেছে। তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রিন্স ফতেসিংহ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করিয়া এখন রাজকার্য শিক্ষা করিতেছে। দ্বিতীয় পুত্র প্রিন্স জয়সিংহ ইংলণ্ডের সুবিখ্যাত হ্যারো স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া সম্প্রতি আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ লাভ করিয়াছে;তৃতীয় পুত্র প্রিন্স শিবাজী রাও বোম্বাই নগরীতে শিক্ষালাভ করিতেছে্ন। একমাত্র কন্যা রাজকুমারী ইন্দিরা বরোদার প্রিন্সেস স্কুলে শিক্ষার্থ প্রেরিত হইয়াছেন্ন। মহারাজা সায়াজী রাও আদর্শ জীবন যাপন করিতেছে। অতুল ঐশ্বর্যের প্রচুর শক্তি লাভ করিয়া, ভোগ বিলাসের সকল উপকরণ সত্ত্বেও যিনি নির্মল জীবন যাপন করিতে পারেন এবং রাজভয় লোভয় তুচ্ছকরিয়া একান্ত মনে কর্তব্যের পথে চলিতে পারেন, তিনি কি ধন্য নন? বরোদার গাইকোয়াড় মহারাজ সায়াজী রাও বর্তমান ভারতের গৌরব।