পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১০৭

যে কত, তাহার ঠিকানা নাই। এমনি করিয়া তাহারা রামকে আনিতে চলিল।

 তাহারা যখন গুহের দেশে আসিল, তখন গুহ এত সৈন্য আর লোকজন দেখিয়া প্রথমে একটু ভয় পাইলেন। তাই তিনি তাহার নিজের লোকদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, ভরত কি রামের অনিষ্ট করিতে আসিয়াছেন? আমি থাকিতে তিনি তাহা পরিবেন না! চল, আমরা তাহার পথ আটকাই। আর যদি তাহার মনে কোন মন্দ ভাব না থাকে, তবে তার কোন ভয় নাই।’

 এই কথা বলিয়া তিনি ভরতের সঙ্গে দেখা করিতে গেলেন। ভরতের কাছে যখন তিনি শুনিতে পাইলেন যে ভরত রামকে ফিরাইয়া আনিতে যাইতেছেন, তখন তাহার মনে খুবই সুখ হইল।

 গুহকে দেখিয়া সকলে রাম লক্ষ্মণ আর সীতার সংবাদ শুনিবার জন্য তাঁহাকে ঘিরিয়া ফেলিল। বনে যাইবার সময় গুহের দেশে আসিয়া তাহারা কোথায় ছিলেন, কী খাইয়াছিলেন, কী কথাবার্তা বলিয়াছিলেন, কোন কথাইনা শুনিয়া তাহারা ছড়িল না। রাম সীতা কুশ বিছাইয়া ইঙ্গুদী গাছতলায় ঘুমাইয়াছিলেন, সেই ইঙ্গুদী গাছতলায় সেই কুশ তখনও রহিয়াছে। গুহ সকলকে তাহাও দেখাইলেন।

 পরদিন গুহের লোকেরা পাঁচশত নৌকা আনিযা ভরতকে গঙ্গা পার করিয়া দিল। গুহ নিজে ভরতের সঙ্গে চলিলেন। গঙ্গা পার হইয়া ভরদ্বাজের আশ্রমে পৌছিতে তাহাদের অধিক দিন লাগিল না। ভরত রামকে আনিতে যাইতেছেন শুনিয়া ভরদ্বাজ মুনি যে কতদূর সন্তুষ্ট হইলেন, তাহা আর কী বলিব! ভরতকে তিনি বলিলেন, “তোমার লোকজন-সুদ্ধ আমার এখানে নিমন্ত্রণ খাইয়া যাইতে হইবে।’

 আর, কী আশ্চর্য নিমন্ত্রণই তিনি তাহাদিগকে খাওয়াইয়াছিলেন! কেহ হয়ত বলিবে যে, মুনি এত টাকাকড়ি কোথায় পাইলেন যে ভরতের লোকদিগকে নিমন্ত্রণ খাওয়াইলেন। কিন্তু কেবল টাকা হইলেই কি সব হইল? তপস্যার দ্বারা ভরদ্বাজ যাহা করিলেন, টাকায় তাহা হয় না। মুনির তপস্যার জোরে তাহার আশ্রমে কোরমা আর পায়সের দিঘি হইল, সরবতের নদী বহিল।

 ভরতের লোকেরা যে সে নিমন্ত্রণ খাইয়া অবাক হইবে তাহা আর আশ্চর্য কী? এরূপ নিমন্ত্রণ কি কেহ কোথাও খাইয়াছে? না এত আয়োজন কেহ ইচ্ছা করিলেই করিতে পারে? নিজে দেবতারা আসিয়া ভরদ্বাজের আয়োজন করিয়াছিলেন;আর গন্ধর্বেরা আসিয়া সেখানে গান গাহিয়াছিলেন।

 এইরূপে ভরদ্বাজের আশ্রমে নিমন্ত্রণ খাইয়া সকলে চিত্রকূট রওয়ানা হইলেন। ভরদ্বাজ তাহাদিগকে বলিলেন, ‘তোমরা যমুনা নদীর দক্ষিণ ধার দিয়া খানিক দূরে যাও। তারপর বাম দিকে যে দক্ষিণমুখো পথ গিয়াছে সেই পথে গেলে রামের সন্ধান পাইবে।

 সেই পথে অনেক দূর চলিয়া, শেষে তাহদের মনে হইল যে হয়ত রাম আর বেশী দূরে নাই। তখন দুই-এক জন লোক বনের ভিতরে ঢুকিয়া দেখিল, এক জায়গায় ধোঁয়া উঠিতেছে। তাহাতে নিশ্চয় বুঝা গেল যে, সেই বনেই রাম আছেন। তখন ভরত সঙ্গের লোকদিগকে সেখানে দাঁড়াইতে বলিয়া নিজেই তাঁহাদিগকে খুঁজতে চলিলেন।

 এদিকে ভরতের লোকজন অনেক দূরে থাকিতেই রাম লক্ষ্মণ তাহদের কলরব শুনিতে