পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৩১


সঙ্গে সঙ্গে বানরের দল পর্বতে উঠিয়া ইহাদের সুখ ভাঙিয়া দিল। তখন তাহারা কে কোথায় পালাইবে তাহাই ভাবিয়াই ব্যস্ত। পাখিরা উড়িতে লাগিল, সাপগুলি গর্তের ভিতর গিয়া লুকাইল, অনেকে পর্বত ছাড়িয়া চলিয়া গেল।



সুন্দরকাণ্ড

 হেন্দ্র পর্বতে উঠিয়া হনুমান একটি ছোট মাঠের উপর দাড়াইল। তার পর জোড়হাতে দেবতাদিগকে প্রণাম করিয়া সে লাফ দিবার জন্য প্রস্তুত হইল। সে সময়ে তাহার শরীর এত বড় হইয়াছিল যে, তাহার ভার মহেন্দ্র পর্বতের সহ্য হইল না। সেই পর্বতের ভিতর হইতে তখন এমনি করিয়া জল বাহির হইয়াছিল যে, ভিজা গামছাকে নিংড়াইলে তাহার চেয়ে বেশি করিয়া জল বাহির হয় না। সেখানকার শেষ উপস্থিত। মুনিরা পর্বত ছাড়িয়া দূরে গিয়া তামাসা দেখিতে লাগিলেন।

তারপর হনুমান দুই হাতে মাটিতে ভর দিয়া, লেজ মোটা করিয়া, শরীর কোঁচকাইয়া, পা গুটাইয়া এমনই ভয়ানক লাফ দিল যে, তাহার কথা মনে কবিলেও যার-পর নাই আশ্চর্য বোধহয়। সেই লাফের চোটে পর্বতের গাছপালা অবধি তাহার পিছু-পিছু ছুটিয়া চলিল; সমুদ্রের জল গিয়া আকাশে উঠিল। তখন হনুমানকে দেখিয়া মনে হইতেছিল, যেন একটা পর্বত আকাশের ভিতর দিয়া ছুটিয়া চলিতেছে। সেজন্য দেবতারা তাহার কতই প্রশংসা করিলেন।

এদিকে সমুদ্র মৈনাক পর্বতকে ডাকিয়া বলিল, ‘মৈনাক, তুমি তুমি শীঘ্র জলের ভিতর হইতে মাথা জাগাইয়া দাও। হনুমানের বোধহয় পরিশ্রম হইয়াছে সে তোমার চুড়ায় বসিয়া বিশ্রাম করিবে।’

মৈনাক পর্বত সমুদ্রের জলের নীচে থাকে। সমুদ্রের কথায় সে তখনই জল হইতে উঠিয়া হনুমানের সম্মুখে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইল। কিন্তু হনুমানের বিশ্রামের কিছুমাত্র দরকার নাই। তাহার উপরে আবার তাহার বড় তাড়াতাড়ি। কাজেই সে মৈনাককে বুকের ধাক্কায় সরাইয়া দিল।

তখন মৈনাক বলিল, ‘হনুমান, তুমি একটু আমার চুড়ায় দাঁড়াইয়া বিশ্রাম কর। আমার চুড়ায় মিষ্ট ফল আছে তুমি তাহা আহার কর। সত্য যুগে যখন সকল পর্বতেরই পাখা ছিল, তখন তাহারা যেখানে ইচ্ছ চলিয়া বেড়াইত আর তাহদের চাপে অনেক জীবজন্তু মারা যাইত। এইজন্য ইন্দ্র বজ্র দিয়া সকল পর্বতেরই পাখা কাটিয়া দেন। কিন্তু তোমার পিতা পবনদেব