পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ছেলেদের রামায়ণ
১৪১
এইরূপ করিয়া হনুমান লঙ্কায় আগুন লাগাইয়া ফিরিতে লাগিল

ততই ছুটিয়া চলিল আর হনুমানও ততই মনের সুখে গর্জন করিতে লাগিল।

সেদিন লঙ্কায় কি সর্বনাশই উপস্থিত হইয়াছিল! যেদিকে চাহিয়া দেখা যায়, সেই দিকেই আগুন দাউদাউ করিয়া জ্বলিতেছে। ধোঁয়ায় আকাশ অন্ধকার, রাক্ষসেরা যে পথ দেখিয়া পলাইবে, তাহারও জোঁ নাই। চারিদিকে কেবল বাতাসের শোঁ-শোঁ, পোড়া কাঠ ফাটার পট-পট, বাড়ি ঘর পোড়ার মড়মড় আর রাক্ষসদিগের হায় হায়। বেচারারা পাগলের মতন ছোটাছুটি করিতেছে আর বলিতেছে, ‘হায় হায় সর্বনাশ হইল।’ ‘ও বাবা গো! এটা কি আসিল!’ ছেলে বুড়ো স্ত্রী পুরুষ কত রাক্ষস যে পুড়িয়া মরিল, তাহার লেখাজোখা নাই।

হনুমান তাহার লেজের আগুন সমুদ্রের জল দিয়া সহজেই নিবাইয়াছিল। কিন্তু লঙ্কার সে সর্বনেশে আগুন কেহই নিবাইতে পারিল না। সেদিন আগুনের তামাশা দেখিয়া হনুমানের মত বড়ই অনন্দ হইয়াছিল।

কিন্তু তাহার আনন্দ অধিকক্ষণ রহিল না। এতক্ষণ সে লঙ্কা পোড়াইতে ব্যস্ত ছিল, তাই সীতার কথা তাহার মনে হয় নাই। তাহার কথা মনে হইবামাত্রই সে ভয়ে আর দুঃখে অস্থির হইয়া ভাবিতে লাগিল, হায় হায়। কি করিলাম সীতাকে-সুদ্ধ বুঝি পোড়াইয়া মারিলাম! এখন আমি রামের কাছে গিয়া কি বলিব যাহা হউক, তখনই আবার তাহার এ কথাও মনে হইল যে সীতা পুড়িয়া মরিবেন ইহা কি সম্ভব? যেন আকাশ হইতে কেহ বলিতেছে, ‘কি আশ্চর্য! লঙ্কা পুড়িযা ছারখার হইল। কিন্তু সীতার কিছুই হয় নাই!’

এ কথা শুনিয়া হনুমানের যে কি আনন্দ হইল তাহা কি বলিব! সে অমনি দুই লাফে গিয়া সীতার নিকট উপস্থিত। তারপর তাঁহাকে অনেক সাহস দিয়া আর তাঁহার পায়ের ধূলা লইয়া, সে সেখান হইতে বিদায় হইল।

লঙ্কার কাছেই অরিষ্ট পর্বত। হনুমান সীতার নিকট বিদায় লইয়া সেই পর্বতে গিয়া উঠিল। তাহার মনে হইল যে সেখান হইতে লাফ দিলে সমুদ্র পার হওয়ার সুবিধা হইবে।

এদিকে হনুমানের সঙ্গের বানরেরা সমুদ্রের ধারে অপেক্ষা করিতেছে। তাহারা কেবল