পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৪৩


হনুমান প্রভৃতিকে আনিতে ছুটয়া চলিয়াছে।

তাহারা আসিলে রাম লক্ষ্মণ আর সুগ্রীব সকল কথাই শুনিতে পাইলেন। হনুমান রামকে সীতার সংবাদ বলিয়া সেই মণি তাঁহার হাতে দিল। রাম মণি হাতে লইয়া, বারবার তাহা দেখিতে লাগিলেন। তারপর তাহা বুকে চাপিয়া ধরিলেন আর তাহার চক্ষু দিয়া ঝর-ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল।


লঙ্কাকাণ্ড

 রপর সকলে উৎসাহে আকাশ পাতাল কাঁপাইয়া লঙ্কায় চলিল। সকলের আগে চলিল নল। সে পথ পরীক্ষায় বড়ই পণ্ডিত। কোন্ পথ ভাল, কোথায় পরিষ্কার জল, কোথায় মিষ্ট ফল, নলের সব মুখস্থ আছে। নল যে পথে যাইতেছে, সেই পথ ধরিয়া অন্যেরা তাহার পিছু পিছু চলিয়াছে। হনুমান রামকে আর অঙ্গদ লক্ষ্মণকে পিঠে করিয়া লইয়াছে। অন্য বানরেরা গাছের ফল খাইয়া, ফুলের শোভা দেখিয়া, মনের সুখে দল বাঁধিয়া চলিয়াছে। এইরূপে তাহারা সেই মহেন্দ্র পর্বতের কাছে সমুদ্রের ধারে আসিয়া উপস্থিত হইল।

এদিকে রাবণ রাক্ষসদের সহিত বসিয়া পরামর্শ করিতেছে। সে বলিল, ‘বল দেখি এখন উপায় কি! বড়ই যে মুস্কিল দেখিতেছি! লঙ্কায় আসিয়া প্রবেশ কবা ত যেমন-তেমন কঠিন কাজ নহে! সেই কাজ সামান্য একটা বানরে করিয়া দিয়া গেল, আমার ঘর বাড়িও ভাঙিল, এতগুলি বাক্ষসও মারিল! বল দেখি এখন কি করা যায়।’

রাক্ষসেরা বলিল, ‘সে কি মহারাজ। আমাদের এত সৈন্য, এত অস্ত্র, আর আপনি এমন বীর! পৃথিবী, আকাশ, পাতাল সকলই আপনি জয় করিয়াছেন। বানর আর মানুষকে আপনার কিসের ভয়? আপনার নিজেরও যুদ্ধ করিতে হইবে না; একা ইন্দ্রজিৎই মানুষ আর বানর মারিয়া শেষ করিবেন।’

প্রহস্ত বলিল, ‘আমি তাহাদিগকে মারিব।’

বজ্রদংষ্ট্র বলিল, ‘আমি একটা বুদ্ধি করিয়াছি। জোয়ান জোয়ান রাক্ষসেরা ভরতের সৈন্য সাজিয়া উহাদের কাছে যাইবে। উহারা কিছুতে বুঝিতে পরিবে না। আর ইহার মধ্যে আমাদের লোকেরা এক সময় তাহাদিগকে বাগে পাইয়া মারিয়া শেষ করিবে।’

রাক্ষসেরা সকলেই এইরূপ বলিতেছে, তাহা দেখিয়া বিভীষণ বলিল, ‘মহারাজ, যাহার জোর নাই, সে কি সাহস করিয়া লঙ্কায় যুদ্ধ করিতে আসে? রামের সীতা রামকে ফিরাইয়া দিন, নহিলে বড়ই বিপদ হইবে। আপনি রামের এত অনিষ্ট করিয়াছেন, তাহতেই ত রাম যুদ্ধ করিতে আসিলেন। এ কাজ আপনার উচিত হয় নাই।’