পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৪৭

১০০০, ১০০০০০, ১০০০, ১০০০০০০০০০০) একহাজার কোটি, একশত শঙ্কু, একহাজার মহাশন্ধু, একশত বৃন্দ, একহাজার মহাবৃন্দ, একশত পদ্ম, একহাজার মহাপদ্ম, একশত খর্ব একশত সমুদ্র আর একহাজার মহীেঘ সৈন্য আসিয়াছে।’

 এ-সকল দেখিয়া শুনিয়া রাবণের মনে খুবই ভয় হইল;কিন্তু সে তাহা শুক, সারণকে জানিতে দিল না। বাহিরে সে যার-পর নাই রাগ দেখাইয়া, শুক, সারণকে বকিয়া সেখান হইতে তাড়াইয়া দিল।

 এরপর একদিন কি হইল শুন। লঙ্কায় বিদ্যুজ্জিতু নামে এক জাদুকর রাক্ষস ছিল। রাবণ তাহাকে দিয়া ঠিক রামের মাথার মতন একটা মাথা আর তাহার ধনুর্বাণের মতন ধনুর্বাণ প্রস্তুত করাইল। তারপর অশোক বনে গিয়া সেই মাথা আর ধনুক সীতাকে দেখাইয়া বলিল, “এই দেখ, তোমার রামকে আমরা মারিয়া ফেলিয়াছি। রাত্রিতে যখন তাহারা ঘুমাইতেছিল তখন আমার সৈন্যেরা গিয়া তাহার মাথা কাটিয়াছে, আর বিভীষণকে ধরিয়া আনিয়াছে। লক্ষ্মণ পলাইয়াছে সুগ্রীবের ঘাড় ভাঙিয়াছে, হনুমান জাম্ববান প্রভৃতি আর সকলে মরিয়া গিয়াছে। এখন আর রামের কথা ভাবিয়া কি করিবে?’

 রাবণের কথা শুনিয়া আর সেই মাথা দেখিয়া সীতা ভয়ানক কাদিতে লাগিলেন। এমন সময় একটা দাবোযান আসিয়া রাবণকে ডাকিয়া লইয়া গেল। রাবণ যাইতে না যাইতেই সেই জাদুর তৈয়ারি মুণ্ড আর ধনুক কোথায় যে মিলাইল, কিছু বুঝা গেল না।

 বিভীষণের স্ত্রী সরমাকে রাবণ সর্বদা সীতার কাছে থাকিতে বলিয়াছিল। সরমা সীতাকে অত্যন্ত ভালবাসিত, আর সর্বদা তাঁহার কাছে কাছে থাকিত। রাবণ চলিয়া গেলে পরেও সীতা মাটিতে লুটাইয়া কাদিতেছেন দেখিয়া সরমা বলিল, সীতা, তুমি কাদিতেছ কেন? রাবণের কথা সকলই মিথ্যা। যুদ্ধও হয় নাই, রামেরও কিছু হয় নাই। আমি নিজে তাহাকে দেখিয়া আসিমাছি। রাক্ষসেরা বড়ই ভয় পাইয়াছে। রাম নিশ্চয় তাহাদিগকে মারিয়া তোমাকে লইয়া যাইবেন।’ সরমা আর সীতা এইরূপ কথাবার্তা বলিতেছেন, এমন সময় বানরদিগের গর্জন শুনা যাইতে লাগিল। সেই গর্জন শুনিয়া রাক্ষসেরা মনে করিল, বুঝি সর্বনাশ উপস্থিত।

 রামের সৈন্য যেখানে ছিল, তাহার কাছেই সুবেল পর্বত। সেই পর্বতের উপর উঠিয়া বানরেরা যুদ্ধের আগের রাত্রি কাটাইল। সুবেল পর্বতের উপর হইতে লঙ্কার সকলই দেখিতে পাওয়া যায়। তাই পরদিন সকালে উঠিয়া সকলে সেখান হইতে লঙ্কার শোভা দেখিতে লাগিল। সেই লঙ্কার উত্তর দরজার কাছে রাবণ নিজে দাড়াইয়া। তাহার দুই পাশে চামর দুলিতেছে মাথার উপরে সাদা ছাতা, গলায় গজমতির মালা।

 রাবণকে দেখিয়া সুগ্রীবেব আর সহ্য হইল না। সে তখনই এক লাফে সেই পর্বতের উপর হইতে একেবারে লঙ্কার দরজার উপরে গিয়া পড়িল। আর-এক লাফে একেবারে রাবণের ঘাড়ে। ঘাড়ে পড়িয়াই হাসিতে হাসিতে তাহার মুকুটটি কড়িয়া লইয়া মাটিতে এক আছাড়! তারপর দুইজনে মল্লযুদ্ধ। রাবণ সুগ্রীবকে ধরিয়া মাটিতে আছড়াইল, সুগ্রীবও রাবণকে আছড়াইল। কিল, চড়, লাথি দুইজনে দুইজনকে যে কত মারিল তাহার লেখাজোখা নাই। এইরূপে রাবণকে অপমান আর নাকাল করিয়া, সুগ্রীব এক লাফে আবার সুবেল পর্বতে চলিয়া আসিল। লজ্জয় তখন রাবণের মুখে আর কথাটি নাই!