পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র



আবার উঠিয়া ভীষণ যুদ্ধ আরম্ভ করাতে, রাম নিজেই তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে চলিলেন। তাহা দেখিয়া হনুমান বলিল, 'আমার পিঠে চড়িয়া যুদ্ধ করুন।’

 হনুমানের উপর রাবণের আগে হইতেই বিষম রাগ। কাজেই এবার তাহাকে বাগে পাইয়া সে খুব করিয়া বাণ মারিতে ছড়িল না। কিন্তু খালি হনুমানকে বাণ মারিলে কি হইবে? রামকে আটকাইতে পারিলে তবে ত হয়! তাহার রথ ঘোড়া সারথি সকলই রাম কাটিয়া শেষ করিয়াছেন, এখন তাহার নিজের প্রাণটি লইয়া টানাটানি। ইহারই মধ্যে তাহার মুকুট গিয়াছে আর সে নিজে এতই কাতর হইয়া পড়িয়াছে যে তাহার আর ধনুক ধরিবারও ক্ষমতা নাই। তাহা দেখিয়া রাম বলিলেন, “তোমার বড়ই পরিশ্রম হইয়াছে দেখিতেছি। আচ্ছা, আজ তোমাকে ছাড়িয়া দিলাম। ঘরে গিয়া বিশ্রাম কর, তারপর অন্য সময়ে দেখা যাইবে।” তখন রাবণ লজ্জায় মাথা হেট করিয়া লঙ্কার ভিতর চলিয়া গেল।

 এখন রাবণ করে কি? সিংহাসনে বসিয়া সে চিন্তা করিতেছে, চারিদিকে রাক্ষসেরা দাঁড়াইয়া। তাহদের দিকে চাহিয়া রাবণ বলিল, এত করিয়া শেষটা কিনা আমাকে মানুষের কাছে হারিতে হইল! পূর্বে যখন তপস্যা করিতে গেলাম, তখন ব্রহ্মা বর দিতে আসিলেন। আমি বলিলাম, “দেবতা অসুর যক্ষ রাক্ষস ইহাদের কেহই আমাকে মারিতে পরিবে না, এই বর আমাকে দিন।” ব্রহ্মা আমাকে সেই বরই দিলেন। মানুষের কথা তখন আমি ভাবি নাই, কাজেই বর লইবার সময় তাহার কথা বলি নাই। সেইজন্যই ত এই বিপদ! আমি কি জানি যে মানুষ এমন ভয়ানক হইতে পারে! তোমরা শীঘ্র গিয়া কুম্ভকর্ণকে জাগাও, সে যদি রাম লক্ষ্মণকে মারিতে পারে।'

 কুম্ভকর্ণ রাবণের ভাই। রাবণের তিন ভাই ছিল; রাবণ বড়, তারপর কুম্ভকর্ণ, তারপব বিভীষণ। ইহারা বিশ্রবা মুনির পুত্র;ইহাদের মাতার নাম কৈকসী। বিশ্রবার আর এক পুত্রের নাম কুবের। রাবণ আর কুম্ভকর্ণ জন্মিবার পূর্বেই বিশ্রবা কৈকসীকে বলিয়াছিলেন, ‘এদুটা ভয়ঙ্কর রাক্ষস হইবে।” কিন্তু বিভীষণের কথায় তিনি বলিয়াছিলেন, ‘এটি ধাৰ্মিক হইবে। আসলেও তাহারা তেমনি হইল। রাবণের আর কুম্ভকর্ণের জ্বালায় লোকে স্থির থাকিতে পারিত না। রাবণের চেয়ে কুম্ভকর্ণটা বেশি দুষ্ট ছিল। মুনিদিগকে পাইলেই সে দুষ্ট ধরিয়া খাইত।

 একদিন কৈকসী কুবেরকে দেখাইয়া রাবণকে বলিলেন, “দেখ দিখি ও কেমন ভাল;তুই বাছা এমনি হইলি কেন?” রাবণ বলিল, “দেখ না মা, আমি ওর চেয়ে বেশি হইব।’ এই বলিয়া সে কুম্ভকর্ণ আর বিভীষণকে লইয়া তপস্যা আরম্ভ করিল।

 সে কি যেমন তেমন তপস্যা। দশ হাজার বৎসর চলিয়া গেল, তবুও তাহদের তপস্যা ফুরইল না। দশ হাজার বৎসর তপস্যার পর ব্রহ্মা আসিয়া রাবণকে বলিলেন, রাবণ আমি সন্তুষ্ট হইয়াছি, তুমি বর লহ।'

 রাবণ বলিল, “এই বর দিন যে আমার মৃত্যু হইবে না।'

 ব্রহ্মা বলিলেন, “এই বর দিতে পারিব না, অন্য বর চাহ। '

 রাবণ বলিল, তবে এই বর দিন যে সৰ্প যক্ষ দৈত্য রাক্ষস আর দেবতা—ইহাদের কেহই আমাকে মারিতে পারবে না। ইহা ছাড়া মানুষ আর অন্য-অন্য যে-সকল জন্তু আছে তাহদের ভয় আমার নাই। ব্রক্ষা কহিলেন, “আচ্ছ, তাহাই হউক। আর ইহা ছাড়া এই বরও দিতেছি