পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১৫৫

কুম্ভকর্ণকে বজ্র দিয়া মারিলেন। কুম্ভকর্ণও ঐরাবতের দাঁত ছিঁড়িয়া লইয়া, তাহার ঘায়ে ইন্দ্রকে অজ্ঞান করিয়া দিলেন।

 কুম্ভকর্ণের অত্যাচার দেখিয়া ব্রহ্মা বলিলেন, “তুমি কেবল ঘুমাইবে।” ইহাতে পৃথিবীর লোক খুবই আনন্দিত হইল বটে, কিন্তু রাবণ নিতান্ত দুঃখিত হইয়া ব্রহ্মাকে বলিলেন, “প্রভু, কুম্ভকর্ণ আপনার নাতির পুত্র। তাহাকে কি এমন করিয়া শাস্তি দিতে হয়? ইহার জাগিবার উপায় করিয়া দিন।” তখন ব্রহ্মা বলিলেন, “আচ্ছ ও ছয় মাস ঘুমাইবে, তারপর একদিন জাগিয়া থাকিবে।” রাবণ আজ বড়ই ভয় পাইয়া সেই কুম্ভকর্ণকে জাগাইয়াছেন।

 এই কথা শুনিয়া রাম বানরদিগকে বলিলেন, “তোমরা সাবধান হইয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক।” বানরেরা বড় বড় পর্বতের চূড়া হাতে করিয়া লঙ্কার দরজা আটকাইয়া রহিল।

 এদিকে কুম্ভকর্ণ রাবণের কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মহারাজ, আমাকে কেন জাগাইয়াছেন? কি করিতে হইবে?”

 রাবণ বলিল, ভাই, তুমি খালি ঘুমাও, কোন খবর ত রাখ না! ইহার মধ্যে দশরথের পুত্র রাম বানর লইয়া আসিয়া লঙ্কা ছারখার করিয়া দিল। বড় বড় বীরেরা তাহাদের হাতে মারা গিয়াছে। লঙ্কায় কি আর যোদ্ধা আছে! তাই তোমাকে জাগাইয়াছি। তুমি যদি ইহাদিগকে মারিতে পার, তবেই রক্ষা!

 তারপর সকল কথা শুনিয়া কুম্ভকর্ণ বলিল, না বুঝিয়া শুনিয়া কাজ করিয়াছেন, তাহাতেই ত এত বিপদ! লোকে এত করিয়া আপনাকে বুঝাইল, আপনি তাহা শুনিলেন না। বিভীষণ যাহা বলিয়াছিল, সেরূপ করিলে কি এমন হইত? তাহাতে রাবণ রাগিয়া বলিল, “তোমার এত কথায় কাজ কি? যাহা বলিতেছি তাহাই কর। জান না, আমি তোমার দাদা? বড় যে উপদেশ দিতে আসিয়াছ।”

 তাহা শুনিয়া কুম্ভকর্ণ কহিল, “আমি যাহা ভাল মনে করিয়াছি, তাহাই বলিয়াছি। দাদা হইলে কি আর তাহাকে ভাল কথা বলিতে নাই? যাহা হউক, আমি থাকিতে আপনার কিসের ভয়? এখনই আমি এগুলিকে মারিয়া দিতেছি।”

 তখন রাবণ যার-পর-নাই খুশি হইয়া বলিল, “ভাই তোমার মত বীর আর কে আছে? তাই ত ইহাদিগকে মারিবার জন্য তোমাকে জাগাইয়াছি। শীঘ্র যাও, শীঘ্র গিয়া রাম লক্ষ্মণ আর তাহাদের সৈন্যদিগকে খাইয়া আইস!”

 তারপর রাবণ নিজ হস্তে কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধের পোশাক পরাইয়া দিল। তাহার সঙ্গে কত সৈন্য দিল তাহার সংখ্যা নাই। যখন কুম্ভকর্ণ গর্জন করিয়া শূল হাতে লঙ্কা হইতে বাহির হইল, তখন বানরেরা ত তাহাকে দেখিয়া ‘বাবাগো’ বলিয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে দে ছুট। একবার দেখিয়া আর তাহারা দুইবার দেখিবার জন্য দাঁড়াইল না।

 অঙ্গদ কি সহজে তাহাদিগকে বকিয়া ফিরাইতে পারে! একবার অনেক কষ্টে তাহারা ফিরিয়াছিল; কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর জন্তুর সামনে টিকিয়া থাকা ত সহজ কাজ নহে! যম পাহাড় সাজিয়া যুদ্ধ করিতে আসিলে তাহাকেও দুচারটা পাথর ছুঁড়িয়া মারিতে পারে, এমন সাহস হয়ত তাহাদের ছিল। কিন্তু এ আপদ যে যমের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ, এ হতভাগা বানর দেখিলেই মিঠাই মণ্ডার মতন তুলিয়া মুখে দেয়! যম ত তাহা করে না। যাহা হউক, এরূপ ভয় খালি ছোট মর্কটগুলাই পাইল, বড় বানরেরা নহে।