পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৭৩

এমনি করিয়া কুয়ার মুখ অবধি লম্বা একটা কাঠি প্রস্তুত করিয়া ফেলিলেন। সেই কাঠি ধরিয়া গোলা টানিয়া তুলিতে আর কতক্ষণ লাগে?

 ছেলেরা আশ্চর্য হইয়া বলিল, “আচ্ছা, আংটিটি তুলুন তো!” ব্রাহ্মণ তীর ধনুক লইয়া দেখিতে দেখিতে আংটিও তুলিয়া আনিলেন। ছেলেরা তো অবাক। তখন তাহারা হাত জোড় করিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল, তারপর বলিল, “আপনি নিশ্চয় কোনো মহাপুরুষ হইবেন। বলুন আপনি কে? আর আমরা আপনার কোন কাজ করিব?”

 ব্রাহ্মণ বলিলেন, “তোমাদের আর কিছুই করিতে হইবে না। তোমরা তোমাদের ঠাকুরদাদা মহাশয়ের নিকট গিয়া বল যে, এইরকম এক বুড়া আসিয়াছে।”

 অমনি সকলে ছুটিয়া গিয়া তাহাদের ঠাকুরদাদা ভীষ্মের নিকট সংবাদ দিল। ভীষ্ম সকল কথা শুনিয়া বলিলেন, “বুঝিয়াছি। দ্রোণাচার্য আসিয়াছেন। এ আর কাহারো কর্ম নহে।” ভীষ্মের অনেকদিন হইতেই ইচ্ছা, ছেলেদিগকে দ্রোণাচার্যের হাতে দেন, সেই দ্রোণাচার্য আপনা হইতেই আসিয়া উপস্থিত। ইহাতে বড়ই আনন্দিত হইয়া, ভীষ্ম তাঁহাকে পরম আদরের সহিত বাড়িতে লইয়া আসিলেন।

 ভীষ্ম, দ্রোণ, ইঁহারা অতি মহৎ লোক ছিলেন। ইঁহাদের খালি নাম আর পরিচয় শুনিলেই হইবে না, ইঁহাদের কথা আরো বেশি করিয়া জানা চাই।

 দেবতাদের মধ্যে আটজনকে আট বসু বলে। এই বসুরা একবার তাঁহাদের স্ত্রীদিগকে লইয়া সুমেরু পর্বতের কাছে একটি সুন্দর বনে বেড়াইতে গিয়েছিলেন। সেই বনে বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম ছিল। বশিষ্ঠের একটি গাই ছিল, তাহার নাম নন্দিনী। এমন সুন্দর গরু আর কখনো হয় নাই, হইবেও না। যত দুধ চাই নন্দিনী তত দুধই দিত আর সে আশ্চর্য দুধ একবাব খাইলে দশ হাজার বৎসর সুস্থ শরীরে বাঁচিয়া থাকা যাইতো।

 বসুদের মধ্যে একজনের নাম দ্যু। তাঁহার স্ত্রীর বড়ই ইচ্ছা হইল, গাইটি লইয়া যাইবেন। উশীনর রাজার কন্যা জিতবতী তাঁহার সখী। সখীকে একবাব এরই গরুর দুধ খাওয়াইতে পারিলে তিনি দশহাজার বৎসর বাঁচিয়া থাকিবেন। আহা, তাহা হইলে কি সুখের কথাই হইবে।

 দ্যুর স্ত্রী যতই এ কথা ভাবেন, ততই তাঁহার গাইটির জন্য মন পাগল হয়, আর ততই তিনি তাঁহার স্বামীকে পীড়াপীড়ি করেন, ওগো লইয়া চল’ লইয়া চল, গাইটি আর বাছুরটি।”

 ইঁহার কথায় শেষে বসুরা আট ভাই মিলিয়া বাছুরসুদ্ধু গাইটিকে চুরি করিলেন।

 বশিষ্ঠ ফলমূল আনিবার জন্য বাহির হইয়াছিলেন, সুতরাং তিনি নন্দিনীকে লইয়া যাইবার সময় দেখিতে পাইলেন না। কিন্তু মুনিরা ধ্যানে সকল কথাই জানিতে পারেন। কাজেই, তাঁহার চোর ধরিতে বেশি বিলম্ব হইল না। তিনি বসুদিগকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, “তোরা দেবতা হইয়া এমন কর্ম করিলি, এজন্য তোরা মানুষ হইয়া পৃথিবীতে জন্মাইবি।”

 বসুদের আটজনের মধ্যে দ্যুরই অধিক দোষ ছিল, অন্যদের দোষ তত নহে। তাই শেষে বশিষ্ঠ দয়া করিয়া বলিলেন যে, অপর সাতজন একবৎসর মানুষ থাকিয়াই আবার দেবতা হইতে পারিবে, কিন্তু দ্যুর, যত বৎসর মানুষ বাঁচে, তত বৎসরই পৃথিবীতে থাকিতে হইবে।

 এখন বসুরা তো নিতান্তই সংকটে পড়িলেন। মুনির কথা মিথ্যা হইবার নহে, কাজেই