পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৭৭

 এইরূপে ভীষ্ম সত্যবতীকে আনিয়া পিতার সহিত বিবাহ দিলেন। শান্তনু তাঁহার এইকাজে কত সুখী হইলেন, বুঝিতেই পার। তিনি তাঁহাকে এই বলিয়া বর দিলেন, “তোমার মরিতে ইচ্ছা না হইলে কিছুতেই তোমার মৃত্যু হইবে না৷”

 সত্যবতীর চিত্রাঙ্গদ আর বিচিত্রবীর্য নামে দুইটি পুত্র জন্মিবার পরে শান্তনুর মৃত্যু হয়। তখন চিত্রাঙ্গদ বড় হইয়াছে, বিচিত্রবীর্য শিশু। ভীষ্ম চিত্রাঙ্গদকে রাজা করিলেন। কিন্তু ইহার কিছুকাল পরেই এক গন্ধর্বের সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া চিত্রাঙ্গদের মৃত্যু হইল। বিচিত্রবীর্যের তখনো রাজা হওয়ার বয়স হয় নাই, ভীষ্ম তাঁহার হইয়া রাজ্যের কাজ দেখিতে লাগিলেন৷

 ক্রমে বিচিত্রবীর্যের বিবাহের বয়স হইল। এই সময়ে ভীষ্ম শুনিতে পাইলেন যে, কাশীরাজের তিন কন্যা অম্বা, অম্বিকা আর অম্বালিকার স্বয়ম্বর হইবে। স্বয়ম্বর, কিনা নিজে দেখিয়া বিবাহ করা। দেশ-বিদেশের রাজা ডাকিয়া মস্ত সভা হয়, কন্যা মালা হাতে সেই সভাতে আসিয়া যাঁহার গলায় সেই মালা পরাইয়া দেন, তাঁহার সঙ্গেই তাঁহার বিবাহ হয়। ইহারই নাম ‘স্বয়ম্বর'। স্বয়ম্ববের কথা শুনিয়াই ভীষ্ম ভাবিলেন যে, তিনটি মেয়েকে আনিয়া তাঁহার ভাইয়ের সহিত বিবাহ দিবেন৷

 কাশীরাজের বাড়িতে স্বয়ম্বরের সভা আরম্ভ হইয়াছে, আর তাঁহার কন্যাদের রূপগুণের কথা শুনিয়া ভারতবর্ষের প্রায় সকল রাজাই তাঁহাদিগকে বিবাহ করিবার আশায় সেখানে আসিয়াছেন। এমন সময় ভীষ্ম তথায় উপস্থিত হইয়া বলিলেন, “আমি আমার ভাইয়ের জন্য এই মেয়ে তিনটিকে চাহিতেছি। ক্ষত্রিয়ের মেয়েদের যে কেবল স্বয়ম্বর করিয়াই বিবাহ হয়, তাহা তো নহে, বিবাহ অনেকরকমেই হইতে পারে। তাহার মধ্যে জোর করিয়া মেয়ে লইয়া গিয়া বিবাহ দিতে পারিলেই লোকে খুব ভালো বলিয়া থাকে। সুতরাং এই দেখ, আমি জোর করিয়া মেয়ে লইয়া যাইতেছি। তোমরা পার তো আমাকে আটকাও৷”

 এই বলিয়া তিনি মেয়ে তিনটিকে রথে তুলিয়া লইয়া চলিলেন। রাজারা সকলে ঘোরতর যুদ্ধ করিয়াও তাঁহাদিগকে রাখিতে পারিলেন না। সকলের শেষে রাজা শাল্ব প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কিন্তু ভীষ্মের হাতে তাঁহারাও খুবই দুর্দশা হইল৷

 তারপর ভীষ্ম সেই তিনটি মেয়েকে যারপরনাই আদরের সহিত বাড়িতে আনিয়া বিচিত্রবীর্যের সহিত তাঁহাদের বিবাহ দিবার আয়োজন করিতেছিলেন, এমন সময় অম্বা বলিলেন, “আমি শাল্বকে ভালোবাসি, আর মনে মনে তাঁহাকেই বিবাহ করিয়াছি৷”

 এ কথায় অম্বাকে ছাড়িয়া দিয়া, অম্বিকা আর অম্বালিকার সঙ্গে বিচিত্রবীর্যের বিবাহ হইল। সেই অম্বিকার ছেলে ধৃতরাষ্ট্র, আর অম্বালিকার ছেলে পাণ্ডু৷

 ভীষ্ম এমনি মহাপুরুষ ছিলেন৷

 আর দ্রোণও নিতান্ত কম লোক ছিলেন না। দ্রোণ, অর্থাৎ কলসীর ভিতর জন্মিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহার নাম দ্রোণ, তিনি ভরদ্বাজ মুনির পুত্র; দ্রোণ অনেক তপস্যা করিয়াছিলেন, সকলরকম বিদ্যা, বিশেষত, ধনুর্বিদ্যা, খুব ভালোরূপেই শিখিয়াছিলেন। তারপর পরশুরামের নিকট তাঁহার সমস্ত অস্ত্র পাইয়া তিনি এমন হইয়াছিলেন যে, তাঁহার সামনে কেহ দাঁড়াইতেই পারিত না৷

 পাঞ্চাল দেশের রাজা পৃষতের পুত্র দ্রুপদের সহিত দ্রোণের ছেলেবেলায় বন্ধুতা হইয়াছিল। তখন দ্রুপদ দ্রোণকে বলিয়াছিলেন, “বন্ধু! আমি রাজা হইলে, সত্য করিয়া বলিতেছি,উপেন্দ্র—২৩