পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৭৯

পার। ভীম আর অর্জুনের ক্ষমতা দেখিয়া ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা আর হিংসায় বাঁচে না৷

 ইঁহাদের পরীক্ষা লইবার জন্য দ্রোণ চুপিচুপি এক কারিগরকে দিয়া একটা নীল পক্ষী প্রস্তুত করাইলেন। তারপর সেটাকে এক গাছের আগায় রাখিয়া, রাজপুত্রদিগকে ডাকাইয়া বলিলেন, ‘তোমরা তীর-ধনুক লইয়া প্রস্তুত হও। এক-একবার এক-একজনকে আমি তীর ছুঁড়িতে বলিব। আমার কথা শেষ হইতে না হইতে তাহাকে ঐ পাখিটার মাথা কাটিয়া ফেলিতে হইবে৷’

 সকলের আগে যুধিষ্ঠিরের ডাক পড়িল। যুধিষ্ঠির ধনুক উঠাইয়া পাখির দিকে তাকাইয়া প্রস্তুত। দ্রোণ জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কি দেখিতেছ?’

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘গাছ দেখিতেছি, আপনাদের সকলকে দেখিতেছি, আর পাখিটাকে দেখিতেছি৷’

 ইহাতে এই বুঝা গেল যে, যুধিষ্ঠিরের নজর ঠিক হয় নাই, তিনি এদিক-ওদিক তাকাইতেছেন। কাজেই এই কথা শুনিয়া দ্রোণ মুখ সিঁটকাইয়া বলিলেন, ‘তবে তুমি পারিবে না। তুমি সরিয়া দাঁড়াও৷’

 এইরূপে এক-একজন করিয়া সকলেই আসিলেন, সকলেই লজ্জা পাইয়া ফিরিয়া গেলেন৷

 শেষে আসিলেন অর্জুন। তাঁহাকেও দ্রোণ ধনুক উঠাইয়া পাখির দিকে তাকাইতে বলিয়া, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কি দেখিতেছ?’

 অর্জুন বলিলেন, ‘আমি কেবল পাখিই দেখিতে পাইতেছি, আর তো কিছু দেখিতেছিনা৷’

 দ্রোণ বলিলেন, ‘সমস্তটা পাখিই দেখিতে পাইতেছ?’

 অর্জুন বলিলেন, ‘না, পাখির কেবল মাথাটুকু দেখিতেছি, আর কিছু না৷’

 এইবার দ্রোণ সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, ‘তবে তীর ছোড়৷’

 কথাটা ভালো করিয়া শেষ হইতে না হইতেই অর্জুন তীর ছাড়িয়া দিলেন কাটা মাথুসুদ্ধ পাখিও মাটিতে পড়িয়া গেল৷

 এমন আশ্চর্য শিক্ষা কি সকলের হয়? দ্রোণের আনন্দ আর ধরে না। তিনি অর্জুনকে বুকে চাপিয়া মনে ভাবিতে লাগিলেন যে, আমার পরিশ্রম সার্থক হইল। অর্জুন আমার কাজ করিয়া দিতে পারিবে৷

 আর-একদিন স্নানের সময় দ্রোণকে কুমিরে ধরিল। সে ভয়ংকর কুমির দেখিয়া রাজপুত্রদের বুদ্ধিসুদ্ধি কোথায় যে চলিয়া গেল, তাঁহারা খালি ফ্যালফ্যাল করিয়া তাকাইয়া আছে, নড়িবার-চড়িবার ক্ষমতা নাই। অর্জুন ইহার মধ্যে ঝকঝকে পাঁচটি বাণ মারিয়া কুমিরকে খণ্ড-খণ্ড করিয়াছেন৷

 দ্রোণ ইচ্ছা করিলেই কুমির মারিয়া চলিয়া আসিতে পারিতেন। কিন্তু রাজপুত্রদিগকে পরীক্ষা করিবার জন্য তিনি তাহা না করিয়া, কেবল ডাকিতেছিলেন, ‘রাজপুত্রগণ! আমাকে বাঁচাও!’ অর্জুনের বুদ্ধি আর সাহস দেখিয়া তিনি তাঁহাকে ‘ব্রহ্মশিরা’ নামক একটি আশ্চর্য অস্ত্র পুরস্কার দিলেন৷

 এটি বড় ভয়ংকর অস্ত্র। তাই দ্রোণ, অর্জুনকে সেই অস্ত্র ছড়িবার আর থামাইবার সংকেত শিখাইয়া, তারপর সাবধান করিয়া দিলেন, ‘দেখিও, যেন মানুষের উপরে এ অস্ত্র কদাচ ছাড়িও না, তাহা হইলে সব ভস্ম হইয়া যাইবে। কোন দেবতার সঙ্গে যুদ্ধ হইলেই এ