পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৮১

আকাশ অন্ধকার করিয়া ফেলিল!

 ভৌমাস্ত্র মারিয়া তিনি মাটির ভিতর ঢুকিয়া গেলেন। পর্বতাস্ত্র মারিয়া কোথা হইতে বিশাল এক পর্বত আনিয়া ফেলিলেন। তারপর যখন অন্তর্ধান অস্ত্র মারিলেন, তখন আর কেহই তাঁহাকে দেখিতে পাইল না৷

 আর কত বলিব? অর্জুন সকলকে অবাক করিয়া তবে ছড়িলেন৷

 এইরূপে খেলা প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, বাজনা থামিয়াছে, সকলে বাড়ি যাইবে, এমন সময় ফটকের কাছে ও কিসের গর্জন? সকলে বলে, ‘একি, বাজ পড়িল? না পর্বত ফাটিল?’

 বাজও পড়ে নাই, পর্বতও ফাটে নাই। উহা কর্ণের হুঙ্কার, আর কিছুই নহে। কর্ণকে যেমন-তেমন লোক মনে করিও না। কেহ বলে তিনি সূর্যের পুত্র, কেহ বলে তিনি অধিরথ নামক সারথির পুত্র। কিন্তু আসলে তিনিও কুন্তীরই পুত্র, অধিরথের কেহ নহেন। কুন্তী কর্ণের মা হইয়াও তাঁহার প্রতি মায়ের কাজ করেন নাই, জন্মিবার পরেই তিনি তাঁহাকে ফেলিয়া দেন৷

 সেই শিশুটিকে অধিরথ কুড়াইয়া পাইয়া তাহার স্ত্রী রাধার নিকট আনিয়া দিল, আর দুজনে মিলিয়া পরম যত্নে তাঁহাকে মানুষ করিতে লাগিল। নিজেদের ছেলেপিলে নাই, তাই এমন সুন্দর শিশুটিকে পাইয়া তাহারা ভাবিল যেন দেবতা দয়া করিয়া তাহাদিগকে একটি পুত্র দিলেন, তখন হইতেই লোকে ভাবে যে কর্ণ অধিরথ আর রাধার ছেলে। কর্ণও ইহাদিগকে পিতা-মাতার মতন মান্য করেন আর ভালোবাসেন। তিনি জানেন না যে তিনি যুধিষ্ঠিরদের ভাই৷

 জন্মাবধিই কর্ণের কানে কুণ্ডল আর পরনে কবচ (অর্থাৎ বর্ম বা যুদ্ধের পোশাক) ছিল। দেখিতে তিনি খুব উঁচু, খুব সুন্দর আর ফরসা, গায় সিংহের মতন জোর। তাঁহাকে দেখিয়াই সকলে ‘ইনিকে? ইনি কে?’ বলিয়া ব্যস্ত হইয়া উঠিল৷

 কর্ণ বড়ই অহংকারী। আর জানই তো, অর্জুনের সঙ্গে তাঁহার কেমন শক্রতা। তাই তিনি অর্জুনের প্রশংসা সহিতে না পারিয়া রাগের ভরে নিজের ক্ষমতা দেখাইতে আসিয়াছে। আর যথার্থই তাঁহার ক্ষমতা কম ছিল না, কারণ, অর্জুন যাহা কিছু করিয়াছিলেন, তাহার সমস্তই তিনিও করিয়া দেখাইলেন। তারপর তিনি বলিলেন, ‘আমি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করিব৷’ ইহাতে সভার মধ্যে ভারি একটা হুলস্থুল কাণ্ড উপস্থিত হইল। একদিকে দুর্যোধন কর্ণকে প্রশংসা করিতেছেন, আর পাণ্ডবদিগকে অপমানের কথা বলিতেছে, অপর দিকে অর্জুন তাহা সহিতে না পারিয়া রাগে কাঁপিতেছে, একটা খুনাখুনি বুঝি না হইয়া যায় না। নিজের দুই পুত্রের এমন ভাব দেখিয়া ভয়ে আর দুঃখে কুন্তী ইহার মধ্যেই অজ্ঞান হইয়া গিয়াছে৷

 এমন সময় কৃপাচার্য কর্ণকে বলিলেন, ‘বাপু, যুদ্ধ যে করিবে, তাহা তো বুঝিলাম, কিন্তু রাজার ছেলে তো আর যাহার তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিতে পারে না, আগে বল দেখি, তুমি কোন্ রাজার বংশে জমিয়াছ, আর তোমার বাপ-মায়েরই-বা কি নাম?’

 কৃপের কথা শুনিয়া লজ্জায় কর্ণের মাথা হেঁট হইল। তাহা দেখিয়া দুর্যোধন বলিল, ‘রাজা হইলেই তো যুদ্ধ হইতে পারে, আচ্ছা আমি এখনই কর্ণকে অঙ্গদেশের রাজা করিয়া দিতেছি!’ তখনই জল আসিল, ব্রাহ্মণ আসিল, আর তখনই কর্ণকে স্নান করাইয়া, ছাতা ধরিয়া, খই