পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৮৩

বন্ধুতার খাতিরে তুমি কি চাহ বল?’

 তারপর তিনি হাসিতে হাসিতে বলিলেন, ‘ভয় নাই, আমি ব্রাহ্মণ, ক্ষমা করাই আমাদের স্বভাব। তাহা ছাড়া শিশুকাল হইতে তোমাকে ভালোবাসি, এখনো তোমার সঙ্গে আমি বন্ধুতাই করিতে চাহি। তোমার রাজ্য এখন আমার হাতে, আমি তাহার অর্ধেক তোমাকে দিয়া অর্ধেক রাখিব। কেননা, আমার একটু রাজ্য না থাকিলে আবার তুমি বলিবে যে, তুই গরিব, তোর সঙ্গে বন্ধুতা করিব না। এখন হইতে গঙ্গার দক্ষিণধারে তোমার, উত্তরধারে আমার জায়গা হইল। কি বল?’

 দ্রুপদ আর কি বলিবেন? এইটুকু যে পাইয়াছে, ইহাই তো ঢের বলিতে হইবে। কাজেই তিনি সবিনয়ে দ্রোণকে ধন্যবাদ দিয়া দুঃখের সহিত ঘরে ফিরিলেন। সেই অবধি তাঁহার এই চিন্তা হইল যে, কি করিয়া দ্রোণকে মারিতে পারা যায়৷

 ইহার পর এক বৎসর চলিয়া গেলে ধৃতরাষ্ট্র যুধিষ্ঠিরকে যুবরাজ করিলেন। যুধিষ্ঠির এমনি ধার্মিক, সরল, দয়ালু আর শান্ত ছিলেন যে, তাঁহার গুণে রাজ্যের সকল লোক মোহিত হইয়া গেল। এদিকে ভীম, অর্জুন, নকুল আর সহদেব মিলিয়া বাহিরের শত্রুদিগকে এমনি শাসনে রাখিলেন যে, তাহারা আর মাথা তুলিতে সাহস পায় না। আর তাহা দেখিয়া ধৃতরাষ্ট্রের মনে এমনি হিংসা হইল যে, রাত্রিতে তাঁহার আর ঘুম হয় না৷

 শেষে আর না থাকিতে পারিয়া তিনি তাঁহার মন্ত্রী কণিককে ডাকাইয়া বলিলেন, ‘মন্ত্রি! এই পাণ্ডবদের বাড়াবাড়ি তো আর আমি সহিতে পারিতেছি না। বল দেখি ইহার কি উপায়?’

 কণিক বলিলেন, ‘মহারাজ, ইহারা আর বেশি বড় না হইতেই এইবেলা ইহাদিগকে মারিয়া ফেলুন৷’

 একদিকে কণিকের এইরূপ পরামর্শ, আর-একদিকে দুর্যোধনের পীড়াপীড়ি৷

 রাজ্যের লোকেরা খালি যুধিষ্ঠির যুধিষ্ঠিরই বলে। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, ভীষ্ম রাজ্য ছাড়িয়া দিয়াছে, কাজেই সকলে এমন গুণবান যুধিষ্ঠিরকে পাইয়া তাঁহাকেই রাজা করিতে চাহিতেছে। এসকল কথা যেন কাঁটার মতো দুর্যোধনের বুকে গিয়া বিঁধিতে লাগিল। তিনি কর্ণ, শকুনি (দুর্যোধনের মামা) দুঃশাসন প্রভৃতিকে লইয়া পরামর্শ করিলেন যে, পাণ্ডবদিগকে পোড়াইয়া মারিতে হইবে৷

 এইরূপ যুক্তি আঁটিয়া দুর্যোধন ধৃতরাষ্ট্র কে বলিলেন, ‘বাবা! আর তো সহ্য হয় না। আপনি আর ভীষ্ম থাকিতে ইহারা নাকি যুধিষ্ঠিরকে রাজা করিতে চাহে। পাণ্ডবদের কাছে হাত জোড় করিয়াই কি শেষটা আমাদের থাকিতে হইবে? তাহা হইলে আর নরকে যাওয়ার বাকি কি রহিল? বাবা! এ অপমান হইতে কি রক্ষা পাওয়া যায় না?’

 দুর্যোধনের কথায় ধৃতরাষ্ট্রের মন আরো খারাপ হইয়া গেল। তখন দুর্যোধন, কর্ণ, শকুনি, দুঃশাসন, ইহারা বলিলেন, মহারাজ! একটিবার যদি বুদ্ধি করিয়া ইহাদিগকে বারণাবত নগরে পাঠাইতে পারেন, তবেই আমাদের আপদ দূর হয়!

 ধৃতরাষ্ট্রের ইহাতে খুবই মত, ভয় শুধু এই যে, পাছে ইহাতে রাজ্যের লোক চটিয়া গিয়া তাঁহাদিগকে মারিতে আসে। তাহাতে দুর্যোধন বলিলেন, ‘ভয় কি? টাকাকড়ি তো সব আমাদেরই হাতে! আমরা টাকা দিয়া সকলকে বশ করিব। একটিবার কুন্তী আর তাহার