বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
১৯৫

“এইয়ো! এদিকে আইস! জান আমি কে? আমি কুবেরের বন্ধু অঙ্গারপর্ণ। আমার ক্ষমতা এখনি দেখিতে পাইবে। মানুষ হইয়া এখানে আসিয়াছ, তোমাদের সাহস কেমন?”

 অজুর্ন বলিলেন, “এই, তোমরা বুদ্ধি যেমন! এটা গঙ্গার ধার, তোমার কেনা জায়গা তো নয়, এখান দিয়া সকলেই যাইতে পারে। জোর বুঝি খালি তোমারই আছে, আমাদের নাই!”

 ইহাতে তো গন্ধর্ব ভারি চটিয়া একেবারে ধনুক বাগাইয়া তীর ছুঁড়িতে আরম্ভ করিল। অর্জুন তাড়াতাড়ি হাতের ঢাল আর মশাল ঘুরাইয়া তীর ফিরাইয়া দিলেন। তরপর ধনুকে আগ্নেয়াস্ত্র জুড়িয়া মারিতেই গন্ধর্ব মহাশয়ের রথ পুড়িয়া ছাই, আর তিনি নিজে মুখ থুবড়িয়া মাটিতে পড়িয়া একেবারে চক্ষু বুজিয়া অজ্ঞান! তখন অর্জুন তাঁহার চুলের মুঠি ধরিয়া তাঁহাকে যুধিষ্ঠিরের নিকট উপস্থিত করিলেন৷

 এদিকে গন্ধর্বের স্ত্রী কুন্তীনসীও যুধিষ্ঠিরের নিকট আসিযা কাঁদিয়া পড়িয়াছেন। কাজেই যুধিষ্ঠির অর্জুনকে বলিলেন, “ভাই উহাকে ছাড়িয়া দাও৷”

 তখন অর্জুন গন্ধর্বকে বলিলেন, “কুরুরাজ যুধিষ্ঠির তোমাকে ক্ষমা করিয়াছেন। কাজেই তোমার আর কোনো ভয় নাই, নিশ্চিন্তে ঘরে চলিয়া যাও৷”

 তাহা শুনিয়া গন্ধর্ব বলিল, “আমি হার মানিলাম। ইহাতে আমার কোনো দুঃখ নাই বরং সুখের কথা। শত্রুকে কাবু করিয়া এমনভাবে দয়া কি যে-সে লোকে করিতে পারে?”

 এই বলিয়া গন্ধর্ব অর্জুনকে চাক্ষুষী-বিদ্যা নামক এক আশ্চর্য বিদ্যা শিখাইয়া দিল। ত্রিভুবনের মধ্যে যে বস্তুই দেখিতে ইচ্ছা হইবে, এই বিদ্যা জানা থাকিলে তাহা তৎক্ষণাৎ দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা ছাড়া পাণ্ডবদিগকে সে একশতটি এমন আশ্চর্য ঘোড়া দিল যে, তাহারা কখনো কাহিল বা বুড়া হয় না, তাহাদের কোনো অসুখ বা মৃত্যু নাই, তাহাদের সমান ছুটিতেও কেউ পাবে না৷

 অর্জুন এই-সকলের বদলে গন্ধর্বকে ব্রহ্মাস্ত্র দিলেন, আর স্থির হইল যে ঘোড়াগুলি এখন গন্ধর্বের নিকটেই থাকিবে, পাণ্ডবদিগের দরকার হইলে তাঁহাদের নিকট আসিবে৷

 এইরূপে গন্ধর্ব আর অর্জুনে বন্ধুতা হইয়া গেল। গন্ধর্বের নাম অঙ্গারপর্ণ আর চিত্ররথ দুইই ছিল। চিত্ররথ বলিল, “এখন হইতে আমার চিত্ররথ নাম ঘুচিয়া দগ্ধরথ নাম হউক৷”

 চিত্ররথ অতিশয় পণ্ডিত লোক, পাণ্ডবেরা তাহার নিকট অনেক নূতন কথা শিখিলেন। পাণ্ডবদের একটি পুরোহিতের প্রয়োজন ছিল। তাই তাঁহারা চিত্ররথকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল দেখি কাহাকে পুরোহিত করি?”

 চিত্ররথ বলিলেন, “ধৌম্যকে পুরোহিত কর, এমন লোক আর পাইবে না। উৎকোচক নামক তীর্থে গেলে তাঁহার দেখা পাইবে৷”

 সুতরাং পাণ্ডবেরা উৎকোচক তীর্থে ধৌম্যের সন্ধানে চলিলেন। তাঁহাকে পুরোহিত করিয়া তাঁহাদের যে কত উপকার হইয়াছিল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায়না। এখন হইতে তাঁহাদের দলে ধৌম্য সমেত সাতজন লোক হইল। সাতজন মিলিয়া তাঁহারা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর দেখিতে চলিলেন৷

 পথে কয়েকটি ব্রাহ্মণের সঙ্গে দেখা। তাঁহারাও স্বয়ম্বরেরই যাত্রী। তাঁহারা পাণ্ডবদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনারা কোথা হইতে আসিতেছেন?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আজ্ঞে, আমরা একচক্রা হইতে আসিতেছি৷”