পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সভাপর্ব

গ্নি আর ইন্দ্র চলিয়া গেলে পরে ময়দানব জোড়হাতে অর্জুনকে বলিলেন, “আপনি আমার প্রাণ বাঁচাইয়াছেন, অনুমতি করুন, আমি আপনার কি উপকার করিব?”

 অর্জুন বলিলেন, “তুমি কৃষ্ণের কোনো কাজ করিয়া দাও, তবে আমাদের উপকার হইবে৷”

 কৃষ্ণ বলিলেন, “তুমি মহারাজ যুধিষ্ঠিরের জন্য এমন একটা সভা-ঘর করিয়া দাও যে আর কেহ তেমন করিতে না পাবে৷”

 ময় সন্তোষের সহিত এ কথায় রাজি হইল। তারপর কৃষ্ণ আব অর্জুন তাহাকে সঙ্গে করিয়া যুধিষ্ঠিরের নিকট লইয়া গেলেন। সেখানে অবশ্য তাহার আদর যত্নের কোনো ত্রুটি হইল না।

 তারপর সভা-গৃহের আয়োজন আরম্ভ হইল। সভাটি যে কিরূপ তাহা ইহাতেই বুঝিতে পারিবে যে, সেটি পাঁচহাজার হাত লম্বা ছিল। এমন সভার আয়োজন কি যেখানে সেখানে মিলে? এ দেশে সে-সব জিনিস জন্মায়ই না। বহুকাল পূর্বে দানবরাজ বৃষপর্বা যজ্ঞের জন্য কৈলাস পবর্তের উত্তরে এই ময়কে দিয়াই এক অতি আশ্চর্য সভা প্রস্তত করান। যুধিষ্ঠিরের সভার জন্য ময় সেই সভার মণি-মুক্তা আর স্ফটিক লইয়া আসিল। সেখানে বিন্দু সরোবর নামে একটি সরোবরের ভিতরে বৃষপর্বার সোনার গদা আর বরুণের দেবদত্ত নামক বিশাল শঙ্খও ছিল৷

 ময় ভীমের জন্য সেই গদা আর অর্জুনের জন্য বরুণের শঙ্খটিও আনিতে ভুলিল না৷

 চৌদ্দ মাসে সভা-ঘর প্রস্তুত হইল। সে সভা কিরূপ সুন্দর হইয়াছিল তাহা আমি কি বলিব! ইটের বদলে তাহা স্ফটিক দিয়া গাঁথা। সেই স্ফটিকের উপরে সূর্যের আলোক পড়িয়া না জানি কেমন ঝক্-ঝক্ করিত! সেখানে বাগান তো ছিলই, তাহার গাছপালা ছিল সোনার, ফুল মণি-মাণিক্যের। আর ভিতরের সাজ কাজ, সে-যে কি আশ্চর্যরকমের ছিল, তাহা বুঝাইব কি, আমিই বুঝিতে পারিতেছি না। আমি তো গরিব মানুষ, বড়-বড় রাজাদেরই তাহাতে ধোঁকা লাগিয়া গিয়াছিল। স্ফটিকের পুকুর দেখিয়া তাঁহারা তাহাকে পুকুর বলিয়া বুঝিতে পারেন নাই, তাঁহারা গিয়াছিলেনতাহার উপর দিয়া হাঁটিতে। তারপর একটা হাসির কাণ্ড হইয়া গেলে তবে বুঝিলেন যে উহা জল!