পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২১১

 এমনি সুন্দর বাড়ি, এমনি সুন্দর বাগান, আর তাহাতে তেমনি সুন্দর মাছের খেলা, ফুলের গন্ধ আর পাখির গান। বুঝিয়া লও, সভাটি কেমন ছিল। আটহাজার বিকট রাক্ষস সেই সভায় পাহারা দিত৷

 সভা দেখিয়া পাণ্ডবেরা খুশি হইবেন তাহা আশ্চর্য কি? তেমন সভা খালি স্বর্গেই আছে, পৃথিবীতে তেমন আর কেহ দেখে নাই। পৃথিবীর রাজারাজড়া, মুনি-ঋষি, ইহারা সকলেই সে সভা দেখিতে আসিলেন। স্বর্গ হইতে নারদ, পারিজাত, রৈবত, সুমুখ,ধৌম্য প্রভৃতি দেবর্ষিরা অবধি সভা দেখিতে আসিবার লোভ সামলাইতে পারিলেন না৷

 নারদ যুধিষ্ঠিরকে ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের আর ব্রহ্মার সভার সম্বন্ধে অনেক আশ্চর্য সংবাদ শুনাইলেন। ইহা ছাড়া মহারাজ পাণ্ডুরও দু-একটি সংবাদ ছিল। স্বর্গ হইতে আসিবার সময় মহারাজ পাণ্ডুর সহিত তাঁহার দেখা হয়। তখন পাণ্ডু তাঁহাকে বলেন, “মহর্ষি! আপনি পৃথিবীতে যাইতেছেন, যুধিষ্ঠিরকে বলিবেন, যেন রাজসূয় যজ্ঞ করে। রাজসূয় যজ্ঞের গুণে রাজা হরিশ্চন্দ্র ইন্দ্রের সভায় কত সুখে বাস করিতেছে। যুধিষ্ঠির সে যজ্ঞ করিলে আমিও সেইরূপ সুখে সেখানে থাকিতে পাইব৷”

 নারদ যুধিষ্ঠিরকে এই সংবাদ দিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন৷

 রাজসূয় অতি কঠিন যজ্ঞ। পৃথিবীর তাবৎ রাজার নিকট হইতে কর আদায় করিয়া তাহার দ্বারা এই যজ্ঞ করিতে হয়, সুতরাং এই যজ্ঞে বাধা দিতে অন্য রাজারা বিধিমতে চেষ্টা করে। নিজের বল-বুদ্ধি আর বন্ধু বান্ধব খুব বেশিরকম না থাকিলে ইহা করা সম্ভবই হয় না। কাজেই রাজয়ের কথা শুনিয়া পাণ্ডবেরা বড়ই ভাবনায় পড়িলেন। এ যজ্ঞ না করিলেই নয়, অথচ কাজটি ভারি কঠিন৷

 বল-বুদ্ধি পাণ্ডবদের যথেষ্ট, বন্ধু-বান্ধবেরও অভাব নাই। যুধিষ্ঠিরকে সকলে প্রাণ ভরিয়া ভালোবাসে। ভীম অর্জুনের সাহস আর ক্ষমতায় প্রজার সকল ভয় দূর হইয়াছে, শত্রুরা দেশ ছাড়িয়া পলাইয়াছে। নকুলের ন্যায়বিচারে আর সহদেবের মিষ্ট ব্যবহারে লোক মোহিত। সুতরাং এ সকল বিষয়ে পাণ্ডবদের বেশ ভরসাব কথাই ছিল। মন্ত্রীরা একবাক্যে যুধিষ্ঠিরকে যজ্ঞ করিতে উৎসাহ দিলেন৷

 কিন্তু ইঁহাদের কথায় যুধিষ্ঠিরের চিন্তা দূর হইল না। পরামর্শ দিবার একটি লোক আছেন কৃষ্ণ। তিনি বলিলে তবে একাজে হাত দেওয়া যায়। এই ভাবিয়া যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে আনাইলেন৷

 কৃষ্ণ আসিলে যুধিষ্ঠির তাঁহাকে বলিলেন, “ভাই রাজসূয় যজ্ঞ করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, তুমি কি বল? আর সকলে তো খুবই উৎসাহ দিতেছে, কিন্তু ইহাদের কথায় আমার ভরসা হয় না। তুমি যাহা বলিবে, তাহাই আমি বুঝিব ঠিক৷”

 কৃষ্ণ বলিলেন, “মহারাজ! আপনি রাজসূয় করিবার উপযুক্ত লোক তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু ইহার মধ্যে ভয়ের একটা কথা আছে। মগধের রাজা জরাসন্ধের এখন অসাধারণ ক্ষমতা। পৃথিবীর সকল রাজাকে সে পরাজয় করিয়াছে। শিশুপাল উহার সেনাপতি, একজন অসাধারণ যোদ্ধা। তারপর বক্র, ভগদত্ত, শল্য, পৌণ্ডক, ভীষ্মক, প্রভৃতি অনেক বড় যোদ্ধা উহার বন্ধু। উহার ভয়ে কত শত রাজা যে দেশ ছাড়িয়া পলাইয়াছে তাহার সংখ্যা নাই। এমন-কি, আমরা নিজে ইহার ভয়ে মথুরা ছড়িয়া দ্বারকায় আসিয়া বাস করিতেছি। অনেক রাজাকে ধরিয়া আনিয়া দুষ্ট তাহার দুর্গের ভিতরে বন্দী করিয়াছে। এ