পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২১৫

কাজ। এজন্য মহাবীর চারি ভাই অসংখ্য সৈন্য লইয়া চারিদিকে ছুটিয়া চলিলেন। অর্জুন উত্তরে, ভীম পূর্বদিকে, সহদেব দক্ষিণে, নকুল পশ্চিমে৷

 অর্জুন ক্রমে কুলিন্দ, কালকুট, আনর্ত, শালদ্বীপ প্রভৃতি জয় করিয়া শেষে প্রাগজ্যোতিষ দেশে উপস্থিত হইলেন। সেখানকার রাজা ভগদত্ত কিরাত, চীন ও সাগরপারী সৈন্য লইয়া আটদিন তাঁহার সহিত ঘোরতর যুদ্ধ করেন। তারপর অর্জুনের ক্ষমতা আর সাহসে আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “আমি ইন্দ্রের বন্ধু! লোকে বলে, আমার ইন্দ্রের সমান ক্ষমতা। কিন্তু তবুও তো তোমাকে কিছুতেই আটিতে পারিতেছি না! তুমি কি চাও?”

 অর্জুন বলিলেন, “আপনি ইন্দ্রের বন্ধু, সুতরাং আমার গুরু লোক। আপনাকে কি আমি কিছু বলিতে পারি? আপনি স্নেহ করিয়া কিছু কর দিন৷”

 ভগদত্ত অতিশয় আহ্লাদিত হইয়া বলিলেন, “কর তো দিবই। আর কি করিতে হইবে বল৷”

 এইরূপে ভগদত্তকে বশ করিয়া, অর্জুন আবার উত্তর দিকে চলিলেন। অন্তর্গিরি, বহির্গিরি, উলুক, কাশ্মীর, ত্রিগর্ত, দারু, কোকনাদ, বাহ্রিক, দরদ, কাম্বোজ, লোল, পরম, ঋষিক প্রভৃতি কত দেশ জয় হইল, করই-বা কতরকম আদায় হইল। হিমালয় পর্বতের ওপারে কিম্পুরুষবর্ষ, হাটক প্রভৃতি কোনো দেশ হইতেই কর না লইয়া ছাড়া হইল না। তারপর অর্জুন উত্তর কুরুদেশে উপস্থিত হইলেন, সে অতি অদ্ভুত দেশ, সেখানে কোথায় কি আছে, কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না, সুতরাং যুদ্ধ কি করিয়া হইবে? সেখানে তিনি উপস্থিত হইবামাত্র পর্বত প্রমাণ প্রহরীগণ আসিয়া হাসিতে হাসিতে তাঁহাকে কহিল, “আপনি যে এখানে আসিয়াছে, তাহাতেই বুঝিয়াছি যে আপনি সামান্য মানুষ নহেন। ইহাতেই আপনার এ দেশ জয় করা হইয়াছে। এখন আপনার কি চাই বলুন, আমরা তাহাই দিতেছি৷”

 অর্জুন বলিলেন, “মহারাজ যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের জন্য আমাকে কিছু কর দিলেই হইবে, আমি আর কিছু চাহি না৷”

 এই কথা শুনিয়াই উহাৱা নানারূপ আশ্চর্য কাপড় আর হবিণের ছাল প্রভৃতি আনিয়া অর্জুনের নিকট উপস্থিত করিল। এইরূপে ক্রমে সমস্ত উত্তর দিক জয় করিয়া অর্জুন কত ধনরত্ন যে দেশে আনিলেন, তাহার লেখাজোখা নাই৷

 ভীম পূর্বদিকে গিয়া, পাঞ্চাল, বিদেহ, গণ্ডক, দশার্ণ, অশ্বমেধ, পুলিন্দ, চেদী, কুমার, কোশল, অযোধ্যা, গোপালকক্ষ, মল্ল, প্রভৃতি অল্পদিনের ভিতরেই জয় করিয়া ফেলিলেন৷

 ভাট, শক্তিমান, বৎসদেশ, ভর্গ প্রভৃতি আরো কত দেশ দেখিতে দেখিতে তাঁহার বশে আসিল। কর্ণকেও যুদ্ধে পরাজয় করিয়া তাঁহার নিকট হইতে কর আনিতে বাকি রইল না৷

 এইরূপে মণি-মুক্তা, চন্দন, কাপড়, কম্বল, সোনা, রূপা প্রভৃতি নানারূপ জিনিস আনিয়া ভীম ভাণ্ডার বোঝাই করিয়া ফেলিলেন৷

 সহদেবও সমস্ত দক্ষিণদিক জয় করিয়া কর আনিলেন। কিষ্কিন্ধ্যার বানরদিগের সহিত তাঁহার ক্রমাগত সাতদিন যুদ্ধ হইয়াছিল, তথাপি বানরেরা হটে নাই বা ভয় পায় নাই। কিন্তু সহদেবের যুদ্ধ দেখিয়া তাহারা বড়ই সন্তুষ্ট হইল। আর সহদেবকে অনেক ধনরত্ন দিয়া বলিল, “এ-সব লইয়া তুমি এখান হইতে চলিয়া যাও। তোমার ভালো হউক৷”

 দক্ষিণে যাইতে যাইতে সহদেব শেষে সমুদ্রের ধারে উপস্থিত হন। সেইখানে লঙ্কা,