পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বিভীষণ তখনো সেখানে রাজত্ব করিতেছিলেন। এখানে কোনোরূপ যুদ্ধের প্রয়োজন হয় নাই, কারণ, বিভীষণ সংবাদ পাইবামাত্র আহ্লাদের সহিত বোঝয় বোঝায় মহামূল্য মণি-মুক্তা দিয়া সহদেবকে বিদায় করিলেন৷

 নকুলও পশ্চিমদিক হইতে কম কর আনেন নাই। একহাজার হাতি সে সকল ধন অতিকষ্টে বহিয়া আনিয়াছিল৷

 যজ্ঞের সময় ক্রমে যতই কাছে আসিল, ততই নানা দেশের রাজারা, মুনিরা আর ব্রাহ্মণেরা দলে দলে উপস্থিত হইতে লাগিলেন৷

 কৃষ্ণ ইহার পূর্বেই আসিয়া, সকলরকম আয়োজন আরম্ভ করাইয়াছে। রাজাদিগের নিকট নিমন্ত্রণ গিয়াছে, পুরোহিতেরা প্রস্তুত হইয়াছে, যজ্ঞের জন্য চমৎকার স্থান প্রস্তুত হইয়াছে, ভোজনের ঘটা লাগিয়া গিয়াছে৷

 নকুল হস্তিনায় গিয়া জোড়হাতে, মিষ্ট কথায়, ভীষ্ম, ধৃতরাষ্ট্র, বিদুর, দুর্যোধন প্রভৃতিকে নিমন্ত্রণ করিয়া আসিয়াছেন। তাঁহারাও আনন্দের সহিত যজ্ঞে উপস্থিত হইয়াছে। অন্য রাজারাজড়া কত আসিয়াছে, তাহার সংখ্যা নাই। ইহাঁদের জন্য সুন্দর বাগানে ঘেরা, মণি-মুক্তার কাজ করা, সোনার দরজা জানালা দেওয়া বিশাল বিশাল পুরী পূর্বেই বহুমূল্য আসন, গালিচা, পালঙ্ক প্রভৃতি দিয়া সাজানো ছিল। মিঠাই মণ্ডার তো কথাই নাই। আর সুগন্ধের কথা কি বলিব। ফুলের গন্ধ, চন্দনের গন্ধ, ধূপের গন্ধ, লুচি সন্দেশের গন্ধ!

 এক-একজন এক একটা কাজে বিশেষ মজবুত, তাঁহাদের উপরে সেই সেই কাজের ভার পড়িয়াছে। দুঃশাসনের উপর খাবার জিনিস দেখাশুনার ভার, অশ্বত্থামার উপর ব্রাহ্মণদিগের আদর-যত্নের ভার, সঞ্জয়ের উপর রাজাদিগের সেবার ভার। ভীষ্ম, দ্রোণ কাজের কুম দিবেন, কৃপাচার্য ধন রত্ন রক্ষা করিবেন। উপহার আসিলে দুর্যোধন লইবেন, আর নিজে কৃষ্ণ ব্রাহ্মণ দিগের পা ধোওয়ার ব্যবস্থা করিবেন৷

 ক্রমে যজ্ঞের পূজা অর্চনার কাজ শেষ হইয়া গেল। মহারাজ যুধিষ্ঠির, যে যাহা চাহিল, তাহাকে তাহাই দিয়া সন্তুষ্ট করিলেন।

 তারপর ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন, “রাজাদিগকে এবং যাঁহারা অর্ঘ্য (মান্য দেখাইবার জন্য উপহার) পাইবার উপযুক্ত, তাঁহাদিগকে এক-একটি করিয়া অর্ঘ্য আনিয়া দাও। তারপর এখানে যিনি সকলের চেয়ে বড় তাঁহাকে আর-একটি অর্ঘ্য দিতে হইবে৷”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “সকলের বড় বলিয়া অর্ঘ্য কাহাকে দিব?”

 ভীষ্ম বলিলেন, “কৃষ্ণই সকলের চেয়ে বড়। তাঁহার সমান মান্য লোেক এখানে আর কেহই উপস্থিত নাই৷”

 তারপর ভীষ্মের কথায় সহদেব কৃষ্ণকে অর্ঘ্য আনিয়া দিলেন। কিন্তু চেদীর রাজা শিশুপালের ইহা কিছুতেই সহ্য হইল না। তিনি যুধিষ্ঠিরকেই-বা কত বকিলেন, ভীষ্মেরই বা কত নিন্দা করিলেন, আর কৃষ্ণকেই-বা কত অপমানের কথা বলিলেন। তারপর আর-আর রাজাদিগকে লইয়া সেখান হইতে চলিয়া যাইবার চেষ্টা করিতেও ছড়িলেন না৷

 রাজাদের মধ্যে অনেকে শিশুপালের সঙ্গে জুটিয়া যজ্ঞ ভাঙ্গিবার আর কৃষ্ণকে মারিবার জন্য পরামর্শ আরম্ভ করিলেন। যুধিষ্ঠির, ভীষ্ম, ইঁহারা শিশুপালকে বুঝাইয়া থামাইতে পারিলেন না, তাহাতে সহদেব রাগিয়া বলিলেন, “যে কৃষ্ণের সম্মান সহ্য করিতে না পারে,