পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘মামা! কথা কহিব কোন লজ্জায়? আমার কি আর বাঁচিয়া লাভ আছে? যে শত্রুকে মারিতে এত চেষ্টা করিলাম, তাহারই কিনা শেষে এত বাড়াবাড়ি!’

 শকুনি বলিলেন, ‘সে কি কথা দুর্যোধন? উহারা নিজের গুণে বড় হইয়াছে, তাহাতে তোমার দুঃখ কেন? ইচ্ছা করিলে তুমিও তো ঐরূপ করিতে পার৷’

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘মামা! যুদ্ধ করিয়া উহাদের সভা আর রাজ্য কাড়িয়া লই৷’

 শকুনি বলিলেন, ‘কৃষ্ণ, অর্জুন, ভীম, যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেব, দ্রুপদ আর ধৃষ্টদ্যুম্ন ইহাদিগকে দেবতারাও যুদ্ধে পরাজয় করিতে পারেন না। তুমি কি করিয়া করিবে? ইহাদিগকে জব্দ করিবার অন্য উপায় আছে৷’

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘কি উপায় মামা?’

 শকুনি বলিলেন, ‘যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলায় বড় সখ, অথচ তিনি ভালো খেলিতে জানেন না। আবার, পাশা খেলায় ডাকিলে তাঁহার ‘না’ বলিবারও জো থাকিবে না। একটিবার আনিয়া তাঁহাকে খেলিতে বসাইতে পারিলে, আমি ফাঁকি দিয়া তাঁহার রাজ্যপাট সব জিতিয়া লইতে পারি। আমার মতো পাশা পৃথিবীতে কেহ খেলিতে জানে না। আগে তুমি তোমার বাবাকে বলিয়া খেলার অনুমতি লও, তারপর আমি সব ঠিক করিয়া দিব৷’

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘আমার বাবাকে বলিতে সাহস হয় না, আপনি বলুন।’

 শকুনি বাড়ি আসিয়াই ধৃতরাষ্ট্রকে বলিলেন, ‘দুর্যোধন তো বড়ই রোগা হইয়া যাইতেছে! আপনি সে খবর নেন না?'

 অমনি ধৃতরাষ্ট্র নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া দুর্যোধনকে বলিলেন, ‘আহা! বাছার তো তবে বড়ই অসুখ হইয়াছে! কি অসুখ তোমার বাবা?’

 দুর্যোধন বলিলেন, ‘বাবা! আমার ভয়ানক অসুখ হইয়াছে! আপনার চেয়ে পাণ্ডবেরা বড় হইয়া গেল, এ কথা ভাবিলে কি আর আমি ভালে থাকিতে পারি? উহাদের বাড়িতে রোজ দশহাজার লোক সোনার থালায় পোলাও খায়। উহাদের মতো এত ধন ইন্দ্রেরও নাই, যমেরও নাই, বরুণেরও নাই, কুবেরেরও নাই। কাজেই আমার যারপরনাই ভয়ানক অসুখ হইয়াছে৷’

 তখন শকুনি বলিলেন, ‘আমি পাশা খেলিয়া উহাদের সব ধন জিতিয়া দিতে পারি। ক্ষত্রিয়কে যুদ্ধে বা পাশায় ডাকিলে তাহার ‘না’ বলিবার জো থাকেনা। যুধিষ্ঠিরকে আমরা পাশায় ডাকিলে তাহাকে আসিতেই হইবে। অথচ সে খেলিতে জানে না, কাজেই আমি ফাঁকি দিয়া তাহার সর্বস্ব কাড়িয়া লইতে পারিব৷

 এ কথায় ধৃতরাষ্ট্র সহজে রাজি হন নাই। তাহার নিজেরও এ কাজটা ভালো লাগিল না, তারপর বিদুরকে ডাকিলে, তিনিও বারবার নিষেধ করিলেন। কিন্তু দুর্যোধনের পীড়াপীড়িতে ধৃতরাষ্ট্র আর স্থির থাকিতে পারিলেন না। আর তাঁহার নিজের মনেও পাণ্ডবদের প্রতি যথেষ্ট হিংসা ছিল। কাজেই তিনি শেষে বলিলেন, ‘হাজার থাম আর একশত দুয়ারওয়ালা একটা খুব জমকালো সভা প্রস্তুত করাও৷’

 সভা অল্পদিনের মধ্যেই প্রস্তুত হইল। তখন ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে বলিলেন, ‘বিদুর! শীঘ্র ইন্দ্রপ্রস্থে গিয়া যুধিষ্ঠিরকে পাশা খেলিবার জন্য নিমন্ত্রণ করিয়া আইস৷’

 বিদুর বলিলেন, ‘মহারাজ! ইহা তত ভালো কথা হইল না। পাশা খেলা বড় অন্যায়৷