পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৩১

 এ কথায় ভীম আহ্বাদের সহিত তখনই ফুল আনিতে চলিলেন, ফুলটি ঈশান কোন (অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব কোণ) হইতে হাওয়ায় উড়িয়া আসিয়াছিল সুতরাং ভীম বুঝিতে পারিলেন যে, ঐদিকে গেলে আরো ফুল পাওয়া যাইবে। সেদিকে অনেক দূর গিয়া তিনি একটা প্রকাণ্ড সরোবরে উপস্থিত হইলেন। সরোবরে স্নান করিয়া তিনি আবার ফুলের খোঁজে চলিয়াছেন, এমন সময় দেখিলেন যে মস্ত একটা বানর তাঁহার পথের উপরে শুইয়া আছে৷

 বানরটাকে তাড়াইবার জন্য ভীম সিংহনাদ করিতে লাগিলেন, কিন্তু বানর তাহা বড়-একটা গ্রাহ্য করিল না। সে খালি একটু মিটিমিটি চাহিয়া বলিল, “আহা! এমন চ্যাঁচাইও না, একটু ঘুমাইতে দাও, আমার অসুখ করিয়াছে৷”

 ভীম বলিলেন, “আমি পাণ্ডুর পুত্র। লোকে আমাকে পবনের পুত্রও বলে। আমার নাম ভীম। তুমি কে?”

 বানর একটু হাসিয়া বলিল, “আমি বানর৷”

 ভীম বলিলেন, “পথ ছাড় নহিলে সাজা পাইবে৷”

 বানর বলিল, “বড় অসুখ করিযাছে উঠিতে পারি না। আমাকে ডিঙ্গাইয়া চলিয়া যাও৷”

 ভীম বলিলেন, “সকল প্রাণীর শরীরেই ভগবান আছে, তোমাকে ডিঙ্গাইলে তাঁহার অমান্য করা হইবে। আমি তাহা পারিব না৷”

 বানর বলিল, “বুড়া হইযাছি, উঠিতে পাবি না। আমার লেজটা সরাইয়া পাশ দিয়া চলিয়া যাও৷”

 ভীম মনে মনে বলিলেন, ‘বটে! আচ্ছা দাঁড়াও, এই লেজ ধরিয়া তোমাকে ধোপার কাপড় কাচা দেখাইতেছি৷’

 এই মনে কবিযা তিনি বাঁ হাতে বানরের লেজ ধরিলেন, কিন্তু তাহা নাড়িতে পারিলেন না! তারপর দু হাতে ধরিযা টানিলেন, তবুও নাড়িতে পারিলেন না। প্রাণপণ করিয়া টানিলেন, তাঁহার চোখ বাহির হইয়া আসিবার গতিক হইল, ভ্রু আব কপাল ভয়ানক কোঁচকাইয়া গেল, মুখ কালো হইয়া উঠিল, গা দিয়া ঘাম ঝরিতে লাগিল—তবুও লেজ নড়িল না। তখন তিনি নিতান্ত লজ্জিত হইযা জোড়হাতে বলিলেন, “মহাশয়, আমার অপ্রাধ হইয়াছে আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি কে?”

 বানর বলিল, “আমি পবন পুত্র, আমার নাম হনুমান৷”

 তখন ভীম তাড়াতাড়ি হনুমানের পায়ের ধূলা লইতে পারিলে বাঁচেন। হনুমান বড় ভাই, ভীম ছোট ভাই, কাজেই দুজনে দুজনকে দেখিয়া যার পরনাই আনন্দিত হইলেন। ভীম বলিলেন, “দাদা শুনিয়াছি সমুদ্র পার হইবাব সময় আপনার বড় ভয়ংকর চেহারা হইয়াছিল। সেই চেহারটি আমি একবার দেখিতে চাই৷”

 হনুমান বলিলেন, “ভাই, ও চেহাবা দেখিয়া কাজ নাই, তুমি ভয় পাইবে৷”

 কিন্তু ভীম ছাড়িবেন কেন? তাঁহার যে বীর বলিয়া বেশ একটু অহংকার আছে। কাজেই শেষটা হনুমানকে সেই চেহারা দেখাইতে হইল।

 কি ভয়ংকর বিশাল চেহারা! কোথায়-বা তাহার মাথা, কোথায় বা তাহার লেজ। সে শরীর বন ছড়াইয়া, পর্বত ছাড়াইয়া আকাশ পর্যন্ত ঢাকিয়া ফেলিল। জ্বলন্ত সোনার মতো তাহার তেজে ভীমের চক্ষু আপনা হইতেই বুজিয়া আসিল। তাহা দেখিয়া হনুমান বলিলেন,