পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

উপরে। এ সকল গোরুর খবর নেওয়া রাজার একটা কাজ, সুতরাং এই কাজের ছল করিয়া দুর্যোধন দ্বৈত বনে যাইতে চাহিলে ধৃতরাষ্ট্রের অমত হইবে না৷

 এই প্রস্তাব শুনিয়া ধৃতরাষ্ট্র প্রথমে বলিলেন, “ওখানে গিয়া কাজ নাই। ওখানে পাণ্ডবেরা আছেন, কি জানি, যদি কোনো কথায় তাঁহাদের সহিত ঝগড়া হয়৷”

 এ কথায় শকুনি বলিলেন, “রাম রাম! আমরা কি তাহাদের কাছে যাইব? আমরা গোরু দেখিয়া আর দুরে দুরে একটু শিকার করিয়াই চলিয়া আসিব উঁহাদের সঙ্গে আমাদের দেখাই হইবে না৷”

 কাজেই ধৃতরাষ্ট্র শেষে রাজি হইলেন। হুকুম পাওয়ামাত্র হাতি ঘোড়া, লোকজন, সৈন্য-সামন্ত, সাজিয়া প্রস্তুত। একলক্ষ গোরু দেখিতে হইবে, তাহার জন্য দশলক্ষ লোক পৃথিবী কাঁপাইয়া দ্বৈত বনে যাত্রা করিল। রাজপুত্রেরা নিজে গিয়া সন্তুষ্ট হইলেন না, আবার পরিবারদিগকেও সঙ্গে লইয়া চলিলেন৷

 গোরু দেখার কাজ দেখিতে দেখিতেই শেষ হইয়া গেল, শিকারেও খুব বেশি সময় লাগিল না। তারপর ক্রমে তাঁহারা সেই সরোবরের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন, যাহার ধারে পাণ্ডবদিগের আশ্রম। সে সময়ে সেই সরোবরে গন্ধর্বরাজ চিত্রসেন সপরিবারে স্নান করিতে আসিয়াছিলেন। তাঁহার সঙ্গের মেয়েদের স্নানের সুবিধার জন্য সরোবরটিকে বেড়া দিয়া ঘেরা হইয়াছিল৷

 গন্ধর্বের দরোয়ানেরা দুর্যোধনের লোকদিগকে সরোবরে যাইতে নিষেধ করে, দুর্যোধন আবার তাহা শুনিয়া গন্ধবদিগকে তাড়াইয়া দিবার হুকুম দেন। এইরূপে ক্রমে দুই দলে গালাগালি হইয়া শেষে ভয়ানক যুদ্ধ উপস্থিত হইল৷

 কৌরবদের সাহস খুব ছিল, আর কর্ণ, দুর্যোধন ইহারা যোদ্ধাও কম ছিলেন না, কাজেই প্রথমে তাঁহারা গন্ধর্বের লোকদিগকে বেশ একটু জব্দই করিয়া তোলেন। কিন্তু তারপর যখন চিত্রসেন নিজে অসংখ্য গন্ধর্ব লইয়া ক্রোধভরে যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন, তখন কৌরবদের আর দুর্দশার সীমাই রহিল না। সৈন্যেরা তো প্রাণপণে তাহাদের মা বাপের নাম লইয়া উধর্বশাসে ছুট দিলই, এমন যে কর্ণ, তিনিও শেষে আর দুর্যোধনের দিকে না চাহিয়াই তাহাদের পিছু পিছু পলায়ন করিলেন৷

 আর দুর্যোধন? সে লজ্জার কথা আর কি বলিব? গন্ধর্বেরা তাঁহাকে আর তাহার ভাইদিগকে তাদের সমস্ত জাঁকজমক সুদ্ধ সপরিবারে বাধিয়া লইয়া চলিল৷

 এদিকে যাহারা পলাইয়াছিল, তাহারা কাঁদিতে কাঁদিতে পাণ্ডবদিগের নিকট আসিয়া দুর্যোধনের দুর্দশার কথা জানাইল। তাহাদের কথা শুনিয়া ভীম বলিলেন, “বাঃ! আমরা অনেক কষ্টে যায় করিতাম, গন্ধর্বেরাই আজ আমাদের সে কাজ করিয়া দিল। যেমন দুষ্ট তাদের তেমনি সাজা হইয়াছে৷”

 যুধিষ্ঠির তখন একটা যজ্ঞ করিতেছিলেন। ভীমের কথা শুনিয়া তিনি বলিলেন, “ছি, ভীম! এমন সময় কি এরূপ কথা বলিতে আছে? উহাদের অপমান হইলে তো আমাদেরই বংশের অপমান। তাহা ছড়া উহারা এখন আমাদের আশ্রয় চাহিতেছে। তুমি, অর্জুন, নকুল আর সহদেব শীঘ্র গিয়া উহদিগকে এড়াইয়া আন। আমি যজ্ঞে ব্যস্ত আছি নহিলে আমি নিজে যাইতাম৷” কাজেই তখন অর্জুন, নকুল আর সহদেব ছুটিয়া চলিলেন৷