পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দাও তারপর জল খাইতে পাইবে।”

 যক্ষের সে কথা অমান্য করিয়া সহদেব যেই জল খাইলেন অমনি তাহারও মৃত্যু হইল।

 এইরূপে ক্রমে সহদেবকে খুজিতে আসিয়া, অৰ্জুন, এবং অর্জুনকে খুজিতে আসিয়া ভীম সেই যক্ষের নিষেধ আমানা করিয়া জলাশয়ের জল খাওয়ায় প্রাণত্যাগ করিলেন৷

 সর্বশেষে যুধিষ্ঠিরও তাহাদের অন্বেষণে সেই জলাশয়ের ধারে আসিয়া তাঁহাদের মৃত শরীর দর্শনে অনেক দুঃখ করার পর, জল পান করিতে উদ্যত হওয়ায়, একটা বক তাঁহাকে বাধা দিয়া বলিল, “বাছা যুধিষ্ঠির! আমিই তোমার ভাইদিগকে মারিয়াছি। আমার কথার উত্তর দিয়া তবে জল খাও।”

 বকের কথা শুনিয়া যুধিষ্ঠির বলিলেন, “এ সকল মহাবীবকে বধ করা পাখির কর্ম নহে! আপনি কে?”

 তখন সেই বক তালগাছ প্রায় বিশাল যক্ষরূপ ধরিয়া বলিল, “আমি যক্ষ । তোমার ভ্রাতারা আমার কথা অবহেলা করিয়া জল পান করাতে, তাহাদিগকে বধ করিয়াছি। তুমি আগে আমার কথায় উত্তর দিয়া, তাবপর জল খাও।”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আপনার প্রশ্ন কি বলুন, যথাসাধ্য উত্তর দিতে চেষ্টা করিব।”

 এ কথায় যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে অনেক প্রশ্ন করিল, যুধিষ্ঠিব তাহার সকল গুলিরই উওর দিলেন সকল প্রশ্নের কথা লিখিবার স্থান এ পুস্তকে নাই, দু-একটি কথা মাত্র বলিতেছি।

 যক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, “পৃথিবীব চেয়ে ভারি কে? স্বগের চেয়ে উচু কে? বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী কে? তৃণের চেয়েও কাহার সংখ্যা বেশি?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মাতা পৃথিবীর চেয়ে ভারি, পিতা আকাশের চেয়ে উচ, মন বাতাসের চেয়েও দ্রতগামী, আর চিন্তার সংখ্যা তৃণের চেয়েও বেশি।"

 যক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, “কে ঘুমাইলে চোখ বোজে না? কে জন্মিয়া ন৬ে চড়ে না? কাহার হৃদয় নাই? কে নিজের বেগেতেই বড় হয়?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মাছ ঘুমাইলে চোখ বোজে না, ডিম জন্মিয়া নড়ে-চড়ে না, পাথরের হৃদয় নাই, নদী নিজের বেগের দ্বারা বড় হয়৷”

 যক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, ”সুখী কে? আশ্চর্য কি? পথ কি? সংবাদ কি?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “যাহার ঋণ নাই, আর নিজের ঘরে থাকিয়া দিনের শেষে যে চারিটি শাক-ভাত খাইতে পায়, সেই সুখী৷ প্রতিদিন জীবের মৃত্যু হইতেছে, তথাপি যে, লোকে চিরদিন বাঁচিতে চায়, ইহাই আশ্চর্ষ৷ মহাপুরুষেবা যে পথে যান, তাহাই পথ৷ সময় যেন পাচক, সে যেন প্রাণীদিগকে দিয়া ব্যঞ্জন রাধিতেছে ইহাই সংবাদ৷”

 যুধিষ্ঠিরের উত্তরে সস্তুষ্ট হইয়া যক্ষ বলিল, “তোমার ইচ্ছামত একটি ভাইকে বাঁচাইতে পার৷”

 এ কথায় যুধিষ্ঠির বলিলেন, “তবে দয়া করিয়া নকুলকে বাঁচাইয়া দিন৷”

 যক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, “ভীম আর অর্জুনকে ছাড়িয়া তুমি নকুলকে বাঁচাইতে বলিলে, ইহার কারণ কি?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, "মাতা কুন্তীর এক পুত্র আমি জীবিত রহিয়াছি, এখন নকুল বাঁচিলে মাতা মাদ্রীরও একটি পুত্র থাকে, এইজন্য আমি নকুলকে বাঁচাইতে বলিয়াছি৷”