পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কে কি কাজ করিতে পারিবে বল তো?” এ কথার উত্তরে অর্জুন বলিলেন, “আপনি কি কাজ করিবেন?”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আমি ব্রাহ্মণ সাজিয়া বিরাটের সভাসদ (অর্থাৎ সভার লোক) হইব। বলিব, আমার নাম কঙ্ক, খুব পাশা খেলিতে পারি। আরো জিজ্ঞাসা করিলে বলিব, আমি যুধিষ্ঠিরের বন্ধু ছিলাম। এখন ভীম বল তো, তুমি কি বলিবে?’ ভীম বলিলেন, ‘আমি রাঁধুনি ব্রাহ্মণ সাজিয়া যাইব। পরিচয় চাহিলে বলিব, আমার নাম বল্লভ, মহারাজ যুধিষ্ঠিরের পাচক ছিলাম, একটু-আধটু পালোয়ানীও জানি। সে দেশের রাঁধুনিদের চেয়ে ঢের ভালো ব্যঞ্জন রাঁধিয়া, আর এই বড় কাঠের বোঝা বহিয়া আনিয়া, হুকুম পাইলে দু-একটা পালোয়ান বা খ্যাপা হাতিকেও ঠ্যাঙ্গাইয়া আমি রাজাকে খুশি রাখিব৷”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আচ্ছা অর্জুন কি করিবে?” অর্জুন বলিলেন “আমি রাজবাড়ির মেয়েদের সঙ্গীতের শিক্ষক হইয়া থাকিব। এ-সব লোকে স্ত্রীলোকের পোশাক পরে, আমিও তাহাই পরিব। ধনুকের গুণের ঘষায় হাতে যে দাগ হইয়াছে, বালা পরিয়া তাহা ঢাকিব। স্ত্রীলোকের মতন কাপড় পরিব মাথায় বেণী রাখিব, কানে কুণ্ডল দুলাইব, কথাবার্তাও স্ত্রীলোকের মতন করিয়া কহিব। তাহা হইলেই আর কেহ আমাকে চিনিতে পারিবে না। পরিচয় চাহিলে বলিব, আমার নাম বৃহন্নলা, আমি দ্রৌপদীর নিকট ছিলাম৷

 তারপর যুধিষ্ঠির নকুলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, নকুল! তুমি কি করিবে?

 নকুল বলিলেন, ‘আমি বলিব, আমার নাম গ্রন্থিক, মহারাজ যুধিষ্ঠিরের ঘোড়াশালের কর্তা ছিলাম। ঘোড়ার কথা আমার মতন কেহই জানে না৷’

 তারপর যুধিষ্ঠির সহদেবকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সহদেব কি করিবে?’

 সহদেব বলিলেন, আমি গোরু দেখা-শোনার কাজ লইব। বলিব আমাৰ নাম তন্ত্রিপাল। আমি গোরু সম্বন্ধে সকলরকম কাজ বিশেষরূপে জানি৷

 সকলের শেষে যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করিলেন, দ্রৌপদী তো কখনো কোনো ক্লেশের কাজ করেন নাই, তিনি এই এক বৎসর কি করিয়া কাটাইবেন?

 দ্রৌপদী বলিলেন, “আমি বিরাট রাজার রানী সুদেষ্ণার নিকট কাজ লইব। জিজ্ঞাসা করিলে বলিব, আমি সৈরিন্ধী (অর্থাৎ যে চুল বাঁধা, মালা গাঁথা ইত্যাদি কাজ কবে,) মহারাজ যুধিষ্ঠিরের বাড়িতে দ্রৌপদীর নিকট ছিলাম৷”

 এইরূপে সকল পরামর্শ স্থির করিয়া পাণ্ডবেরা সঙ্গের লোকদিগকে বিদায় দিলেন। চাকদিগকে বলিলেন, ‘তোমরা দ্বারকায় চলিয়া যাও৷’ ধৌম্যকে বলিলেন, সারথী, পাচকগণ, আর দ্রৌপদীর দাসীকে লইয়া আপনি রাজা দ্রুপদের বাড়িতে গিযা থাকুন৷

 তারপর তাঁহারা উপস্থিত ব্রাহ্মণ ও মুনিদিগের আশীর্বাদ লইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। কোথায় গেলেন, তাহা কেহই জানিতে পারিল না৷

 অবশ্য আমরা জানি, তাঁহারা মৎস্যদেশে গিয়াছিলেন। সঙ্গে তাহাদের অস্ত্রশস্ত্র ও বর্ম ছিল৷

 পাহাড়ের আড়াল দিয়া, বনের ভিতর দিয়া, বহু কষ্টে, অতি সাবধানে পথ চলিয়া পাণ্ডবেরা ক্রমে দশার্ণ, পাঞ্চাল, শূরসেন প্রভৃতি দেশ অতিক্রম পূর্বক শেষে বিরাট নগরের কাজে উপস্থিত হইলেন। তখন তাদের মনে এই চিন্তা হইল যে, এইসকল অস্ত্র লইয়া