পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিবেন কি, তাহার পূর্বেই ভীমের গদার ঘায় তাঁহার রথের ঘোড়া আর সারথি চুরমার হইয়া গিয়াছে। ততক্ষণে সহদেব প্রভৃতিও ভীমের সাহায্য করিতে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, নিজে বিরাটও ভরসা পাইয়া ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছেন৷

 সুশর্মা ভাবিলেন, ‘বড় বিপদ! এই বেলা পালাই!’

 কিন্তু হায়! যুদ্ধের সময় ভীমেব সম্মুখ হইতে পালাইবার যেমন দরকার হয়, কাজটি তেমনি কঠিন হইয়া উঠে! সুশর্মা কয়েক পা যাইতে না যাইতেই ভীম তাহার চুলের মুঠি ধরিয়া বসিলেন। তারপর আছাড়, কীল চড় প্রভৃতি কোনো সাজাই বাকি রহিল না—বাকি রহিল খালি প্রাণ বাহির কবিযা দেওয়া৷

 তখন বিরাটেব গোরু ও সুশর্মাকে লইয়া সকলে এক জায়গায় আসিযা মিলিলেন। সেখানে যুধিষ্ঠিবের ইচ্ছামত সুশর্মাকে কিছু মিষ্ট উপদেশ দিযা ছাড়িযা দেওযা হইল। এই ঘটনায় বিরাট যে পাণ্ডবদের উপর নিতান্তই সন্তুষ্ট হইলেন, এ কথা বলাই বাহুল্য। তিনি বলিলেন, “আপনাদের কৃপায় আজ আমার প্রাণ, মান সবই বজায় রহিল। এখন বলুন আপনাদিগকে কি দিয়া সন্তুষ্ট কবিব?”

 এ কথাব উত্তবে যুধিষ্ঠিৰ বলিলেন, “মহারাজ। শত্রুর হাত হইতে বক্ষা পাইয়াছেন ইহাই আমাদের যথেষ্ট পুবস্কাব। আপনি সুখে থাকুন৷”

 তারপর যুদ্ধ জয়ের সংবাদ লইযা দূতেরা বিবাট নগবের দিকে ছুটিয়া চলিল। অন্য সকলে সে রাত্রি যুদ্ধক্ষেত্রে কাটাইযা পরদিন বাড়ি ফিবিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন৷

 এদিকে বিরাট নগরে অনেক বড়-বড় ঘটনা ঘটিতেছিল। বিরাট দলবল লইয ত্রিগর্ত দেশে যুদ্ধ করিতে গিযাছেন, বাডিতে রাজপুত্র উত্তর আর কয়েকজন কর্মচাবি ছাড়া আর কেহ নাই। ইহাব মধ্যে দুর্যোধন অসংখ্য সৈন্য আর ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, কৃপ, অশ্বত্থামা, শকুনি, দুঃশাসন প্রভৃতি বড়-বড় বীব সমেত আসিয়া মৎস্য দেশে উপস্থিত। তাহাবা আসিয়া বিরাটের গোযালাদিগকে ঠেঙ্গাইয়া একেবাবে ষাট হাজাব গোরু লইয়া প্রস্থান কবিলেন। গোয়ালারা মার খাইয়া চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে আসিযা বাজবাড়িতে খবর দিল৷

 পূর্বেই বলিয়াছি, তখন রাজবাড়িতে আর যোদ্ধা ছিল না, ছিলেন কেবল রাজপুত্র উত্তর। তিনি বাড়ি ভিতর হইতে এই সংবাদ শুনিয়া স্ত্রীলোকদিগের নিকট বাহাদুবি লইবাব জন্য বলিতে লাগিলেন, “কি করি, একজন সারথি নাই। ভালো একজন সারথি পাইলে, আমি ভীষ্ম-টিষ্মকে মারিয়া, এখনই গোরু ছাড়াইয়া আনিতাম। কৌরবেরা দেশ খালি পাইয়া গোরু চুরি করিয়া নিতেছে আমি সেখানে থাকিলে দেখিতাম, কেমন করিয়া নেয়।”

 এ কথা শুনিয়া অর্জুন চুপিচুপি দ্রৌপদীকে কি যেন শিখাইয়া দিলেন, তাবপর দ্রৌপদী আসিয়া উত্তরকে বলিলেন, “রাজপুত্র, আপনাদের বৃহন্নলা নামক ঐ হাতি হেন সুশ্রী ওস্তাদটি আগে অর্জুনের সারথি ছিলেন, উনি তাঁহারই শিষ্য, আর যুদ্ধেও তাঁহার চেয়ে বড় কম নহে। পাণ্ডবদের ওখানে থাকার সময় তাহার কথা আমি বেশ করিয়া জানিয়াছি। এমন সারথি আর কোথাও নাই৷”

 উত্তর বলিলেন, “তাহা তো বুঝিলাম, কিন্তু আমি নিজে উহাকে কেমন করিয়া আমার সারথি হইতে বলি?”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “আপনার ভগ্নী উত্তরা বলিলে, উনি নিশ্চয় রাজি হইবেন। আব